নেত্রকোনায় শিশুকে লাঠি দিয়ে পেটালেন ইউএনও, ভিডিও ভাইরাল


নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুয়েল সাংমা লাঠি দিয়ে এক শিশুকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
যদিও ঘটনাটি আরও পাঁচ মাস আগের বলে জানা গেছে। এদিকে এ ঘটনায় গত রোববার আদালতে মামলাও হয়েছে। তবে মামলার বাদী ওই ভুক্তভোগী শিশুর কাছের কেউ নন, অন্য এক ব্যক্তি। ভুক্তভোগী ওই শিশু (১৭) উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মারধরের অভিযোগে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান কবির গত রোববার নেত্রকোনার আটপাড়া আমলি আদালতে মামলাটি করেন।
মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত ইতিমধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ মার্চ ঈদুল ফিতরের আগে বানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদে ২ হাজার ৩৭ জন উপকারভোগীকে ১০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। সে সময় লাইনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে ইউএনও ঘটনাস্থলে যান এবং পুলিশের কাছ থেকে লাঠি নিয়ে শিশুকে পেটান।
বাদীর আইনজীবী মিজানুর রহমান জানান, মামলার সঙ্গে মারধরের ভিডিও সংযুক্ত করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী রায়হান কবির বলেন, ‘আমি সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। ইউএনও পুলিশ নিয়ে এসে শিশুটিকে লাঠি দিয়ে পেটান। আমরা থামানোর চেষ্টা করলেও তিনি থামেননি। একজন সরকারি কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণ শোভন নয়।’
ভুক্তভোগী শিশু জানায়, ‘আমি সেদিন চাল নিতে গিয়ে ভিড়ের কারণে বাঁশের বেড়া ভেঙে পড়ে যাই। তখন ইউএনও এসে আমাকে মারধর করেন ও বিকেল পর্যন্ত আটকে রাখেন। পরে আমার চাচি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আসেন।’
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ ঈদুল ফিতরের আগে বানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদে উপকারভোগীদের ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এ সময় কার আগে কে চাল নেবে—এ নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ইউএনও রুয়েল সাংমা। তখন তাঁকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় ওই শিশু। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি লাঠি নিয়ে শিশুকে আঘাত করেন। এতে অন্যরা ভয় পেয়ে শান্ত হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার চাল বিতরণ শুরু হয়।
ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ইউএনও শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দিতে চান। তবে তার আত্মীয়রা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইলে শিশুকে ক্ষমা করেন ইউএনও।
পাশাপাশি ওই ঘটনায় নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে ইউএনওর কাছ মুচলেকা দেয় শিশুটি।
যোগাযোগ করা হলে ইউএনও রুয়েল সাংমা বলেন, ‘ওখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। কয়েকজন চাল লুটের চেষ্টা করছিল, তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি গত মার্চ মাসের। ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম হচ্ছিল। তখন ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেয়। ইউএনও গিয়ে দেখেন, কিছু ছেলে চাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে তিনি নিজের টেম্পার ধরে রাখতে পারেননি। অবশ্যই তিনি অন্যায় করেছেন, তিনি লাঠি ধরতে পারেন না। এটা ঠিক হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এটার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ছেলেটি ক্ষমা প্রার্থনার মুচলেকা দিয়েছে। সেটা আছে। মার্চ মাসের ঘটনা আগস্ট মাসে এসে কথা হচ্ছে। এখন কেন? সেটা তো মার্চ মাসেই হতে পারত।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ওই ইউনিয়নের সচিবকে বিভিন্ন অভিযোগে বদলি করা হয়। পরে ওই সচিব পুরোনো জিনিসটা সামনে নিয়ে আসেন। গত সপ্তাহে তাঁরা ইউএনওর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা করেছেন রায়হান নামের একজনকে দিয়ে। সাক্ষী করা হয়েছে শিশুটিকে। যাই হোক, তারপরও আমরা এটাকে (ইউএনওর মারধর) সমর্থন করছি না। এ ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ইউএনও অন্যায় করেছেন। কিন্তু ওখানে অনিয়মও (চাল বিতরণে) হয়েছে। সব মিলিয়ে বিষয়টি ভালো হয়নি। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ক্রাইম জোন ২৪