শিরোনাম

ভারতে ভোটার তালিকায় এক নারীর নাম ৬ বার

ভারতে ভোটার তালিকায় এক নারীর নাম ৬ বার

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পালঘর জেলার নলসোপাড়া বিধানসভা এলাকায় এক নারীর নাম ভোটার তালিকায় ৬ বার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। প্রতিবারই ওই নারীর সঙ্গে আলাদা ইলেক্টর ফটো আইডি কার্ড (ইপিআইসি) নম্বর যুক্ত রয়েছে। সোজা কথায় এই নারীর নাম ৬ বার আসলেও প্রত্যেকবার তাঁর ভোটার নম্বর ভিন্ন ভিন্ন হিসেবে এসেছে। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা ও ভোটার তালিকা প্রস্তুতের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের খবরে বলা হয়েছে, ৩৯ বছর বয়সী সুষমা গুপ্তা নলসোপাড়ার মাতাজি জিভদানি চোলে এলাকায় বসবাস করেন। তাঁর স্বামীর নাম সঞ্জয় গুপ্তা। স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক অভিষেক কুমার গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিষয়টি তুলে ধরেন।

অভিষেক কুমার জানান, সুষমা গুপ্তার নাম ভোটার তালিকায় ৬ বার রয়েছে। প্রতিবারই আলাদা ইপিআইসি নম্বরসহ, তবে ছবি একই এবং স্বামীর নাম, বয়স ও ঠিকানা অভিন্ন। বিস্ময়ের বিষয়, একটি এন্ট্রিতে তাঁর নাম লেখা হয়েছে ‘গুপ্তা গুপ্তা।’

ইসির ওয়েবসাইটের ‘ইলেকটোরাল সার্চ’ অংশে নলসোপাড়া এলাকায় ৩৯ বছর বয়সী সুষমা গুপ্তা, স্বামী সঞ্জয় গুপ্তা—নামে অনুসন্ধান করলে, তাহলে পাঁচটি ফলাফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে চারটি আইডির ঠিকানা নীলমোর এলাকায় এবং একটি তুলিনজ এলাকায়। একইভাবে ‘আবার গুপ্তা গুপ্তা’ নামে খোঁজ করলে নীলমোর এলাকায় আরও একটি আইডির খোঁজ পাওয়া যায়।

ভারতীয় থিংক ট্যাংক কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ ক্রস-ভেরিফিকেশন করে নিশ্চিত করেছে যে, ইসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা ভোটার তালিকাতেও সুষমা গুপ্তার নাম ছয়বার রয়েছে। সব এন্ট্রিতেই আলাদা ইপিআইসি নম্বর থাকলেও ঠিকানা ও স্বামীর নাম একই। ছবিও একই। তবে ছয়টি আইডির মধ্যে তুলিনজ এলাকার একটি আইডি এরই মধ্যে ডিলিট করা হয়েছে।

কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের পরিচালক ভেঙ্কটেশ নায়েক জানান, এই এন্ট্রির ইপিআইসি নম্বর দিয়ে ইসির ওয়েবসাইটে খোঁজ করলে ‘ডিলিটেড’ অবস্থা দেখা যায় না।

নায়েক আরও বলেন, ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা ভোটার তালিকার সর্বশেষ আপডেটের তারিখ ২৯ নভেম্বর, ২০২৪। সম্ভবত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সারাংশ সংশোধনের পর এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে ভোটারদের ছবি নেই, যা ইসির গোপনীয়তা নীতির অংশ। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে তালিকা ঘুরছে, তাতে ছবি রয়েছে। ফলে, অনুমান করা যায়, এটি সম্ভবত ভোটিং এজেন্টদের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এটি বিধানসভা নাকি লোকসভা নির্বাচনে ব্যবহৃত হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

ইসির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি এন্ট্রির মধ্যে পাঁচটির ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোবিন্দ বোদকে, নির্বাচন নিবন্ধন কর্মকর্তা শেখর ঘাড়গে এবং বুথ-লেভেল কর্মকর্তা সাক্ষী সাওয়ান্তের নাম রয়েছে। বাকি একটিতে বুথ-লেভেল কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন পল্লবী সাওয়ান্ত।

নায়েক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘লোকসভা ও বিধানসভা—দুই দফা নির্বাচনের সময় এসব একাধিক এন্ট্রি কেউ কীভাবে খুঁজে পাননি?’ তাঁর মতে, এটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অসংগতির একটি উদাহরণ মাত্র। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা, মহারাষ্ট্র এবং ইসিকে এ বিষয়ে নাগরিকদের কাছে জবাব দিতে হবে।’

এই ঘটনা সামনে এল এমন সময়ে, যখন লোকসভায় বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা বিধানসভা এলাকায় ভোটার তালিকায় অসংগতির অভিযোগ তুলেছেন। গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে এখানে বিজেপি এগিয়ে ছিল। রাহুলের দাবি, ইসি ও বিজেপির আঁতাতের ফলেই এসব ঘটেছে। এ ছাড়া, বিহারে ইসির চলমান বিশেষ ব্যাপক সংশোধনের অংশ হিসেবে খসড়া ভোটার তালিকায় অসংগতির খবরও সম্প্রতি এসেছে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button