শিরোনাম

এক ডিসির উচ্ছেদ, আরেক ডিসির লিজ

এক ডিসির উচ্ছেদ, আরেক ডিসির লিজ

চট্টগ্রাম নগরে পরীর পাহাড়ে যাতায়াতের দুর্ভোগ কমাতে বছরখানেক আগে সড়কের পাশের ২৩ শতক জায়গার ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা ভেঙে দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। উচ্ছেদের পর সেখানে জনস্বার্থে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর ডিসি রদবদল হলে সেই উদ্ধার করা জায়গা আরেক দখলদারের হাতে চলে গেছে। সেখানে নতুন করে দোকানপাট ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রশাসন দাবি করছে, তারা সরকারি খাস জায়গাটি লিজ দিয়েছে। যদিও কোনো নথি তারা দেখাতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে, জেলা প্রশাসনের যোগসাজশে বিএনপিপন্থী এক রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি ওই জায়গা নিজেদের দখলে রেখেছেন। তাঁদের তত্ত্বাবধানে সেখানে দোকানপাট ও মার্কেট নির্মাণের পর লাখ লাখ টাকায় ভাড়া দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের দুটি পৃথক ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস, আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ অন্তত ৩০টি স্থাপনা রয়েছে চট্টগ্রাম নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ওই পরীর পাহাড়ে। প্রতিদিন সেখানে অন্তত ৩০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। তবে পাহাড়ে যাওয়ার জন্য রাস্তাটি সরু হওয়ায় নিয়মিত দুর্ভোগে পড়তে হয় যাতায়াতকারীদের। এ জন্য ২০২৪ সালে ১১ জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আন্দরকিল্লা মৌজার বিএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানের পরীর পাহাড়ে ওঠার মূল সড়কসংলগ্ন ১৭টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেন। জমি কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত এমন কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, সরকারি এই জমির দাম কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা।

ওই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বদানকারী জেলা প্রশাসনের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, পরীর পাহাড়ে ওঠানামার যে রাস্তা রয়েছে, সেটি খুবই সরু। এ জন্য অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। উচ্ছেদ করা জায়গায় ওয়াশ ব্লক স্থাপন ও জনসাধারণের চলাচলের জন্য পথ প্রশস্তকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে সে পরিকল্পনা পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি।

এখন আবারও বেদখল হয়েছে জায়গা। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, ‘জায়গাটি আমরা একসনা বন্দোবস্তি (লিজ) দিয়েছি। সেখানে কোনো পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না, এমন শর্তে লিজ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম মোবাইল ফোনে বলেন, পাকা স্থাপনা নির্মাণ না করার শর্তে জায়গাটি অস্থায়ীভাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালে ৯ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন ফরিদা খানম। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে সরকারি এ জায়গাটি আবার বেদখল হয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মূল সড়ক-লাগোয়া পরীর পাহাড়ে যাওয়ার প্রবেশমুখের সড়কসংলগ্ন ওই জায়গাটির একটি অংশ উঁচু টিন দিয়ে কয়েক মাসে আগে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এর ভেতরে চলছে বহুতলা মার্কেট নির্মাণের কাজ। ইস্পাতের কাঠামো দিয়ে নির্মাণাধীন স্থাপনাটির বর্তমানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পর্যন্ত মূল অবকাঠামো বসানো হয়েছে। উচ্ছেদ করা জায়গার আরেক অংশে টিন-লোহা ও কংক্রিট দিয়ে একটি স্ট্যাম্প মার্কেট করা হয়েছে। সেখানে অন্তত ৭টি দোকান বসানো হয়েছে।

এত দিন সেখানে জেলা প্রশাসনের সাইনবোর্ড ঝুলছিল। কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। স্ট্যাম্প মার্কেটের এক দোকানের মালিক গত শনিবার দাবি করেন, তিনি ডিসি অফিস থেকে কয়েক মাস আগে দোকানটি ভাড়া নিয়েছেন।

তবে প্রশাসনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোপনে জায়গাটি একটি স্ট্যাম্পমূলে দখলদারদের হাতে তুলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ জন্য এটার কোনো রেকর্ডপত্র সংশ্লিষ্ট তহশিলদার ও ভূমি অফিসে আসেনি। এ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ডিসি অফিস অনিয়মের মাধ্যমে এক প্রভাবশালীর হাতে ওই জায়গা তুলে দিয়েছে। ওই প্রভাবশালীর নাম রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এ জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকা লেনদেনের কথা উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button