শিরোনাম

৬ পদে নিয়োগে ৪০ লাখ টাকার বাণিজ্য

৬ পদে নিয়োগে ৪০ লাখ টাকার বাণিজ্য

রংপুরের বদরগঞ্জ ওয়ারেছিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় তিন দফায় অফিস সহকারী ও ল্যাব সহকারীসহ ৬টি পদে ছয়জনকে নিয়োগ দিয়ে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ১ মাস আগে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আব্দুর রউফসহ ১০ জন শিক্ষক-কর্মচারী ইউএনও কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কিন্তু গত শুক্রবার পর্যন্ত কমিটি তাঁদের কার্যক্রম শুরু করেনি বলে জানা গেছে।

অভিযোগ এবং মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম ওলামা লীগের সভাপতি ছিলেন। এ কারণে তাঁর দাপট ছিল অন্য রকম। তিনি ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইটের ছোট ভাই বদরগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গভর্নিং বডির সভাপতি করে নিয়োগ-বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। এতে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা তো দূরের কথা, নিয়োগ বোর্ডে থাকা কিছু সদস্যও পাত্তা পাননি।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিয়োগ দেওয়ার আগে মাদ্রাসার উন্নয়নের কথা বলে ল্যাব সহকারী (কাম কম্পিটার) পদে ইমরান আলীর ৭ লাখ ৫০ হাজার, ল্যাব সহকারী (ফুড) পদে বাবু কিশোর কুমারের ৭ লাখ, ল্যাব গবেষণাগার পদে মো. আনোয়ার হোসেনের ২ লাখ ৫০ হাজার, অফিস সহকারী পদে তানজিমুল মীমের ৩ লাখ, নিরাপত্তাকর্মী পদে খায়রুজ্জামানের ১০ লাখ ও আয়া পদে জেসমিনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন অধ্যক্ষ।’

মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আব্দুর রউফ বলেন, ‘তিন দফায় ছয়জন নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীকে নিয়ে আমরা অফিসে বসেছিলাম। তাঁরা নিয়োগ নিতে কে কত টাকা দিয়েছেন, তা আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। অধ্যক্ষ উন্নয়নের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আজ পর্যন্ত মাদ্রাসায় ১ টাকার উন্নয়ন করা হয়নি।

টাকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ল্যাব সহকারী (ফুড) পদে বাবু কিশোর কুমার বলেন, ‘লিখিত অভিযোগে যা লেখা আছে তা-ই সত্যি।’ আয়া জেসমিন বলেন, ‘নিয়োগ নিতে টাকা দিয়েছি। তবে এই টাকা আমি সরাসরি দেইনি। আমার ভাই দিয়েছেন।’ নিরাপত্তাকর্মী খায়রুজ্জামান বলেন, ‘নিয়োগের সময় আমার পরিবার টাকা দিয়েছে। টাকার পরিমাণ আমি জানি না।’ ল্যাব সহকারী ইমরান আলী বলেন, ‘লিখিত অভিযোগে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা-ই সত্যি।’ ল্যাব গবেষণাগার মো. আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম বলেন, ‘ভাই, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি কারও কাছ থেকে ১ টাকাও নিইনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি যা করেছি, বিধি মেনে করেছি।’

বদরগঞ্জ ইউএনও মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই মাদ্রাসায় নিয়োগ-বাণিজ্যের ঘটনায় শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার শামীম আরা ইয়াছমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি।’ গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে রংপুরের বদরগঞ্জের একাডেমিক সুপারভাইজার শামীম আরা ইয়াছমিন বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে এখনো তদন্ত শুরু করা হয়নি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button