জোর করে শিক্ষকের পদত্যাগ, বছরজুড়ে আছেন খেয়ে না খেয়ে


২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট। ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল। প্রধান শিক্ষক ভবেশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমে আসে তারা। পরদিন তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গভর্নিং বডি তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করে।
ঘটনার তিন মাস পর (১৯ নভেম্বর) একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় নামে—তবে এবার দাবি একটাই—শিক্ষক ভবেশ চন্দ্র রায়কে পুনর্বহাল করা। পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা।
এর পর থেকে কেটে গেছে প্রায় এক বছর। ভবেশ চন্দ্র রায় দফায় দফায় বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। দুই সন্তানের লেখাপড়াসহ পরিবার নিয়ে বেকায়দায় পড়েন এই শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরপর কয়েকটি চিঠিতে বলা হয়, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগের ঘটনায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বেতন-ভাতা চালু রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে আরও একটি পরিপত্রে ‘জোরপূর্বক পদত্যাগ করা শিক্ষকদের’ তথ্য পাঠানোর নির্দেশ আসে। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠান, যেখানে স্পষ্টভাবে ভবেশ চন্দ্র রায়কে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত বা অগ্রগতি দেখা যায়নি।
জানতে চাইলে ভবেশ চন্দ্র রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ (গভর্নিং বডি) জোর করে পদত্যাগ করিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে পরিষ্কার নির্দেশনা থাকার পরও গভর্নিং বডির সভাপতি ও পুলিশ সুপার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমার পরিবারে দুই সন্তান পড়াশোনা করছে—এখন এমন অবস্থা, এক বেলা খেলে আরও এক বেলা খেতে পারি না।’
ভবেশের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ। তাঁকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে সরানো হয়েছে। এই অন্যায়ের শাস্তি যেন গোটা পরিবার ভোগ করছি। দুই সন্তান পড়ে—বই কিনতে, ফি দিতে, ন্যূনতম খাবার জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছি। স্বামী মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অথচ কোনো সমাধান নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী যদি অন্যায় করতেন, আমি মুখ খুলতাম না। কিন্তু তিনি সৎ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক। আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিন—এটাই আমার আবেদন। রান্নাঘরে হাঁড়ি চড়াতে ভয় লাগে, কারণ, জানি, চাল শেষ হয়ে গেছে। কখনো ভাবিনি একজন শিক্ষক পরিবার নিয়ে এমন দিনে পড়বেন।’
এ বিষয়ে পুলিশ লাইনস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভবেশ চন্দ্র রায়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। উত্তর এলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার শাহীন আকতার জানান, পুলিশ লাইনস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ সরাসরি পুলিশ সুপারের অধীনে। বিষয়টি তিনি দেখছেন।