শিরোনাম
চেনা সবজির অচেনা পদব্রাহ্মণপাড়ায় বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুপানি, বাধাগ্রস্ত স্বাভাবিক কার্যক্রমপাকিস্তানি ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড পুলিশের তদন্ত, ঘটনা কীভেনেজুয়েলা প্রেসিডেন্ট মাদুরোর গ্রেপ্তারের পুরস্কার বাড়িয়ে ৫ কোটি ডলার করল ট্রাম্প প্রশাসনঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহতপর্তুগিজ ক্লাবের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকের পর রোনালদো বলছেন, খেলা এখনো বাকিঢাকার বাতাস আজ সহনীয়বীরগঞ্জে গোডাউন থেকে ১৬ মেট্রিক টন সরকারি চাল জব্দদৈনিক আজকের পত্রিকার ফটো সাংবাদিক হেলাল সিকদারের বাবার মৃত্যু, সিইউজের শোকডোপ টেস্টে পজিটিভ, চবিতে শিক্ষকতা থেকে বাদ দুই প্রার্থী

ইতিহাসের পাতায় মজলুমের বিজয়গাথা

ইতিহাসের পাতায় মজলুমের বিজয়গাথা

জুলুম এক অন্ধকার, যা মানবতাকে গ্রাস করার চেষ্টা করেছে প্রতিটি যুগে। কিন্তু চিরন্তন সত্য হলো, জুলুম ক্ষণস্থায়ী, আর মজলুমের বিজয় সুনিশ্চিত। মজলুমের কান্না আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তার দোয়ার মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। নবীজি (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ‘মজলুমের দোয়াকে ভয় করো। কারণ, তার (দোয়া) এবং আল্লাহর মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।’ (সহিহ বুখারি)

যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা জুলুমের শিকার হয়েছেন, কিন্তু তাঁদের দৃঢ় ইমান ও ধৈর্য শেষ পর্যন্ত বিজয়ের আলো এনেছে। ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে তাঁদের সেই বিজয়গাথা।

নমরুদের জুলুম ও হজরত ইব্রাহিমের সত্য প্রতিষ্ঠা

নমরুদের দাম্ভিকতা যখন তুঙ্গে, তখন সে নিজেকে প্রভু দাবি করল। তার জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন আল্লাহর এক তরুণ বন্ধু, নবী ইব্রাহিম (আ.)। সত্যের পথে অটল থাকায় তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয় নমরুদ। কিন্তু মজলুমের পক্ষে ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ। নমরুদের জ্বালানো বিশাল অগ্নিকুণ্ড ইব্রাহিমের জন্য শান্তির বাগানে পরিণত হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি বললাম, হে আগুন, তুমি ইব্রাহিমের জন্য শান্তিদায়ক ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া: ৬৯)। নমরুদের জুলুম চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে আল্লাহ তাকে শায়েস্তা করেন সামান্য এক মশার মাধ্যমে। পতন হয় তার ৪০০ বছরের শাসনের। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ২/৮৭৮)

জুলুমের বিপরীতে ইউসুফ (আ.)-এর বিজয়

হজরত ইউসুফ (আ.) তাঁর ভাইদের হিংসার শিকার হয়ে কূপের গভীরে নিক্ষিপ্ত হন। বাজারে বিক্রি হন ক্রীতদাস হিসেবে, এমনকি মিথ্যা অপবাদে বন্দী হন কারাগারে। প্রতিটি ঘটনা ছিল একেকটি চরম জুলুম। কিন্তু তিনি কখনো আল্লাহর ওপর থেকে ভরসা হারাননি। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘এভাবেই আমরা ইউসুফকে দেশে ক্ষমতা দান করেছিলাম এবং ইচ্ছা করলে সে তথায় যেকোনো স্থানে অবস্থান করতে পারত।’ (সুরা ইউসুফ: ৫৬)

শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাঁকে মিসরের রাজত্বের মালিক বানান। তিনি শুধু ক্ষমতা ফিরে পাননি, বরং ক্ষমা ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাঁর ভাইদের জুলুমকে পরাজিত করে এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দেন। যখন ভাইয়েরা তাঁর সামনে লজ্জিত হয়ে দাঁড়ায়, তখন তিনি বলেন, ‘আজ তোমাদের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইউসুফ: ৯২)

ফেরাউনের জুলুম ও হজরত মুসার বিজয়

ফেরাউনের জুলুমের শিকার হয়ে বনি ইসরাইলরা যখন দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ, তখন আল্লাহ তাদের মুক্তির জন্য হজরত মুসা (আ.)-কে পাঠান। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করলাম যে জমিনে যারা দুর্বল, তাদের অনুগ্রহ করব; তাদের নেতা বানাব এবং তাদের উত্তরাধিকারী করব।’ (সুরা কাসাস: ৫)। ফেরাউনের সীমা লঙ্ঘন যখন চরমে পৌঁছায় এবং সে নিজেকে খোদা দাবি করে, আল্লাহ তখন তাদের জন্য নীলনদকে দুই ভাগ করে দেন। মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা মুক্তি পান, আর ফেরাউন তার বিশাল বাহিনীসহ সেই পানিতে ডুবে যায়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘অতঃপর আমি তাকে ও তার সৈন্য বাহিনীকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম।’ (সুরা আরাফ: ১৩৬)

মক্কার কাফিরদের জুলুম ও নবীজির বিজয়

ইসলামের শুরুতে মক্কার কাফিরদের দ্বারা মুসলমানরা চরম নিপীড়নের শিকার হয়। সাহাবি হজরত বেলাল (রা.), হজরত সুমাইয়া (রা.) এবং তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়। কিন্তু তাঁরা ধৈর্য ও ইমানের ওপর অটল থাকেন। চোখ বুজে সব সহ্য করেন। কিন্তু হিজরতের পর বদর যুদ্ধে অল্পসংখ্যক মুসলিম সৈন্যের হাতে কাফিরদের পরাজয় ছিল মজলুমের বিজয়ের প্রথম রণহুংকার। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘আর আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করেছেন, অথচ তোমরা দুর্বল ছিলে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১২৩)। আর ‘ফাতহে মক্কা’ বা মক্কা বিজয় ছিল ইসলামের ইতিহাসে মজলুমের বিজয়ের এক শ্রেষ্ঠতম ও চূড়ান্ত নিদর্শন।

মুসলমানদের পুনরুত্থান ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট

ইতিহাসে মজলুমের বিজয়গাথা শুধু নবী-রাসুলদের যুগে সীমাবদ্ধ ছিল না। মুসলমানরা যখন দীর্ঘকাল নিপীড়িত ছিল, তখনই তাদের মধ্য থেকে উঠে এসেছেন বীরেরা, যেমন সালাহউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) মুসলমানদের একতাবদ্ধ করে দীর্ঘদিনের দখলদারি থেকে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন। তাঁর এই বিজয় ছিল মজলুমের আত্মমর্যাদা ফিরে পাওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর এই বিজয় প্রমাণ করে যে যখন মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তখন তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই জুলুমের পরিস্থিতিতে প্রয়োজন মুসলমানদের একতা, দোয়ার শক্তি, ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা)।

আল্লাহ তাআলা তাঁর মজলুম বান্দাদের জন্য বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জালিমের ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু মজলুমের গল্প ইতিহাসে অমর। মজলুম কাঁদে, কিন্তু হার মানে না। আর জুলুম কখনো স্থায়ী হয় না। মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো মজলুমের পাশে থাকা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ও কণ্ঠ তোলা এবং আল্লাহর কাছে তাদের বিজয়ের জন্য দোয়া করা।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button