শিরোনাম

রানে ফিরতে শান্তকে কী পরামর্শ দিলেন কোচ

রানে ফিরতে শান্তকে কী পরামর্শ দিলেন কোচ

এক ম্যাচ ভালো খেলার পর দীর্ঘদিন অফফর্মে থাকার রোগটা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনেক পুরোনো। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ডের অনেক ক্রিকেটার যেমন অল্প সময়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের মানিয়ে নেন, বাংলাদেশ সেখানে অনেকটাই পিছিয়ে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেন দ্রুত আন্তর্জাতিক মঞ্চে দ্রুত নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কাজ শুরু করেছে। জাতীয় দলের পুলভুক্ত কিছু ক্রিকেটার নিয়ে গত বছর ‘বাংলা টাইগার্স’ নামের একটি বিশেষ অনুশীলন ক্যাম্প চালু করে বিসিবি। যার সুফলও দেখা গিয়েছিল। গত বছর পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ২–০ ব্যবধানে জিতেছিল। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার আরও বিস্তৃত পরিসরে, প্রায় সারা বছর ধরেই অনুশীলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় নেমেছে বিসিবি।

‘বাংলা টাইগার্স’ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা কোচ সোহেল ইসলাম আজ দুপুরে বিসিবি ভবনে কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। উদাহরণ হিসেবে তিনি নাজমুল হোসেন শান্তর কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাটারদের মতো তিনি টানা কয়েক ম্যাচ ভালো খেললেও হঠাৎ করেই ব্যর্থতার চক্রে ঘুরপাক খেতে থাকেন শান্ত। সোহেল বলেন, ‘এক টেস্টে দুইটা সেঞ্চুরির পর পরের ম্যাচে কেন সে ব্যর্থ হচ্ছে। টানা রান করে যাওয়ার উদাহরণ আমাদের দেশে খুব কম। কিন্তু ভারত বা অন্য দেশগুলোতে প্রচুর উদাহরণ আছে। আমাদের ব্যাটারদের মানসিকতাটা বদলাতে চাই। রান হয়ে গেছে, সেটা ভুলে এবার কীভাবে আবার নতুন করে বড় ইনিংস খেলবে, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা এই বিষয়গুলোতে কাউন্সেলিং করছি। কথা বলছি।’

রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির মতো তারকা ক্রিকেটারদের ছাড়াই এবার ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ খেলছে ভারত। নতুন টেস্ট অধিনায়ক শুবমান গিলের ইংল্যান্ড সিরিজটা কেটেছে স্বপ্নের মতো। ৫ ম্যাচের ১০ ইনিংসে ৭৫৪ রান করেছেন। চারটি ফিফটির সবকটিতেই সেঞ্চুরিতে পরিণত করেছেন। পাশাপাশি রবীন্দ্র জাদেজা, লোকেশ রাহুলরা ৫০০-এর বেশি রান করেছেন এই সিরিজে। ওয়াশিংটন সুন্দরের ব্যাট থেকেও এসেছে সেঞ্চুরি।ভারতীয় ক্রিকেট এতটাই প্রতিযোগিতামূলক যে করুণ নায়ারকে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে ভারতের জাতীয় দলের দরজা খুলতে হয়েছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির কথা বলতে গিয়ে ভারতের উদাহরণ টেনেছেন সোহেল। মিরপুরে সাংবাদিকদের আজ তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছি, সেটাই মূল বিষয়। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট দেখলে বোঝা যায় কতটা প্রতিযোগিতামূলক। ওখানে একশো–দুইশো রান নিয়মিত ব্যাপার। আমাদের এখানে একটা সেঞ্চুরি হলেই আমরা সেটায় তৃপ্ত হয়ে যাই। কোচ ও মিডিয়াও তখন সেটাকে বড় করে তুলে ধরে। অথচ আমাদের দেখতে হবে—সে রানটা কিভাবে করেছে, কী পরিস্থিতিতে করেছে, কার বিপক্ষে করেছে, ওগুলো কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল।’

এক-দুই ম্যাচ ভালো বা খারাপ করলেই বাংলাদেশে সেই ক্রিকেটারকে নিয়ে অনেক বড় ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। সোহেলের মতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো অনেক সময় এক-দুই ম্যাচ দেখে কাউকে মূল্যায়ন করে ফেলি। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন অধিকাংশ ক্রিকেটারের গড় রান ও ধারাবাহিকতা বাড়বে, তখনই মান উন্নয়ন হবে। বড় ইনিংস খেলা ও ধারাবাহিক রান করাটা অভ্যাসের ব্যাপার। কিন্তু সেই অভ্যাসটাই আমাদের নেই।’

সোহেলের মতে ধারাবাহিক হতে টেকনিকের পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি। মিরপুরে আজ স্পিন বোলিং কোচ বলেন, ‘কোথায় রান করলাম, সেটাই বড় বিষয় না। পরের ম্যাচে নতুনভাবে মনোযোগ দিয়ে খেলতে হবে। কেউ টানা দুই ম্যাচে রান করছে—সে কিভাবে নিজের চিন্তাভাবনা সাজাবে, সেটা নিয়েই আমরা বেশি চিন্তা করছি। আমাদের সংস্কৃতিতে এই ব্যাপারটা ছিল না। কিন্তু শুরু তো করতেই হবে। আমরা সেই ক্ষুধাটা তৈরি করতে চাই—ভেতর থেকে যেন আসে।’

গড়, স্ট্রাইক রেটের বিষয়ে একটি মানদণ্ড তৈরির চেষ্টা করছেন সোহেল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘লাল বলে ৫০ গড় ভালো। কিন্তু ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে গড় যদি ৮০ তোলা যায়, তাহলে উন্নতি হবে। একজন ভালো ব্যাটার কীভাবে খেলছে, তার গড়, স্ট্রাইকরেট—এসব নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। একইভাবে বোলারদের ইকোনমি রেট, ম্যাচে ইম্প্যাক্ট—এসব নিয়েও কাজ চলছে।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button