রোববারের বৈঠকে দাবি না মানলে ফের ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি


পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন, গাড়ির ইকোনমিক লাইফ বাড়ানোসহ যে আট দফা দাবি তুলেছেন, তা নিয়ে আগামী রোববার তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। বৈঠকে দাবি আদায় না হলে ১২ আগস্ট থেকে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ফের হুমকি দিয়েছেন পরিবহন ও শ্রমিক নেতারা।
আজ শুক্রবার বিকেলে গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সভায় এই হুমকি দেন তাঁরা।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আমরা বায়ুদূষণ বা দুর্ঘটনা চাই না। পুলিশের হয়রানিও সহ্য করতে চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে গাড়ি চালাতে চাই। গাড়িকে দূষণের জন্য দোষারোপ করা হলেও বুড়িগঙ্গা বা তুরাগ নদী কে দূষণ করল, সে প্রশ্ন তোলা উচিত।
‘আমাদের আট দফা দাবি ন্যায্য। এটা আমাদের বাঁচা-মরার লড়াই। দাবি আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগামী রোববারের বৈঠকের পর মাঠে নামার জন্য সবাই প্রস্তুত থাকুন।’
সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু বলেন, ‘আট দফা দাবির পক্ষে আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ করছি। বিদ্যমান সড়ক আইনে দুর্ঘটনা ঘটলে চালকদের জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের ২ হাজার টাকার জরিমানা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা অমানবিক। আমরা সরকারের কাছে সড়ক আইন সংশোধনসহ আট দফা দাবি পেশ করেছি।
‘এগুলো না মানলে ১২ আগস্ট থেকে সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে। দাবি আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগোতে হবে। না হলে সামনে কেউই গাড়ি চালাতে পারবে না।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে যা কিছু করণীয়, আমরা তা করব। গাড়ি না চালিয়ে ইনকাম ট্যাক্সের অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে—এ ধরনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না। গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে, অথচ একটি গাড়ির চেসিজ বদলালেই সেটির আয়ুষ্কাল আবারও বাড়ে। এটা সরকারও জানে।
‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যে সড়ক আইন হয়েছে, তা আসলে কালো আইন। এই আইনের ভয়ে চালকেরা এখন গাড়ি চালাতে চান না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে চালকের ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে। এমন হলে আমাদের গাড়ি বন্ধ করে দিতে হবে।’
৮ দফা দাবি আদায়ে গত ২৭ জুলাই প্রথম সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। সেদিন তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১১ আগস্টের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া না হলে পরদিন সকাল ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে সব ধরনের বাণিজ্যিক যানবাহন (বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার) ও হালকা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের দাবিগুলো হলো–
- সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারা সংশোধনসহ অতিরিক্ত কিছু ধারা পুনর্বিবেচনা।
- বাণিজ্যিক মোটরযানের ইকোনমিক লাইফ ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা। এই সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০ ও ২৫ বছরের পুরোনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখতে হবে।
- বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করে আগের হার বহাল রাখা।
- রিকন্ডিশন্ড বাণিজ্যিক গাড়ি আমদানির মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা।
- দুর্ঘটনায় জব্দ করা গাড়ি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় ফিরিয়ে দেওয়ার বিধান বাস্তবায়ন।
- মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা প্রণয়ন।
- মহাসড়কে অটোরিকশা, টেম্পু ও অনুমোদনহীন হালকা যান পৃথক লেনে চালানোর ব্যবস্থা।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্রুত ডেলিভারি ও শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা বাস্তবায়ন।