ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে আপত্তি নেই, তবে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে জামায়াত


ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। তবে নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র দেখছে বলে মনে করছে দলটি। দলটির নায়েবে আমির আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্র দেখছি। কারণ এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যাপারে সরকার তেমন কোনো স্টেপ নেয় নাই।’
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২০ তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অনেকগুলো কাজ। যেমন, প্রবাসীদের ভোটার করা। তারপরে বিভিন্ন আইন তৈরি করা, ভোটার লিস্টকে আপডেট করা, বিদেশের ভোটারগুলোকে নথিভুক্ত করা, তাদের (সরকার) কমিটমেন্ট আছে প্রবাসী ভোটের ব্যাপারে, সেটা এখনো করে নাই। অলরেডি ছয় মাস পার হয়েছে। তাহলে আমরা যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরে নিই, তাহলে এসব প্রস্তুতি তো আরও জোরদার হতে পারে। সে জন্যই আমাদের কাছে একটু আশঙ্কা লাগে, কোনো জায়গা থেকে কন্সপিরেসি (চক্রান্ত) আছে কিনা।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘যদি একটা ফেয়ার ইলেকশন হয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সেখানে তৈরি হয় এবং কিছু আইনের পরিবর্তন দরকার। কে সরকারে যাবে কে বিরোধী দল যাবে এটা ডিসাইড করবে জনগণ। তবে তার পূর্বশর্ত হচ্ছে একটা ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশন। আমরা সে জন্যই মানুষ যে রায় দেবে সে রায়কে আমরা মাথা পেতে নেব এবং আমি মনে করি এই নির্বাচনে জনগণ জেতা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে মূলত সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পিএসসির (পাবলিক সার্ভিস কমিশনের) ওপরেই আমাদের আলোচনা আজকে হচ্ছে। আলোচনার শুরুতে একটুখানি আমাদের আজকের পার্লামেন্ট (জাতীয় ঐকমত্য হাউস) একটু উত্তেজিত হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই কয়েকটি সাংবিধানিক কমিটি স্বাধীন ছিল। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো আইনগত সিস্টেম ছিল না। কিন্তু আমরা দেখছি, নিয়ম যেটাই হোক ড্রয়ার থেকে একটা স্লিপ বের হয় এবং সেই স্লিপ অনুসারেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা রাজনৈতিক কারণে চাকরি পায়নি। অনেক ব্রিলিয়ান্ট লোকেরা রাজনৈতিক কারণে চাকরি হারিয়েছে। এটার জন্য সবচেয়ে বেশি সাফার করেছে রাষ্ট্র।’
এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘অনেক সচিব ড্রাফট করতে পারত না, ড্রাফিংটা অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লেভেলের কাজ, কিন্তু দেখা যায় সচিব ড্রাফটিং জানে না। অনেক সচিব আছেন যারা ইংরেজিতে ড্রাফট করতে পারে না। এই যে বিশাল একটা অধঃপতন, আমাদের রাষ্ট্রের চেয়ে দুর্বলতা, বিদেশে গিয়ে নেগোশিয়েট করতে পারে না। সে জন্য আমরা বলেছি, পিএসসির সাংবিধানিক একটা কমিটি থাকবে। এখানে কোনো দলের কোনো মন্ত্রীর কোনো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ থাকতে পারবে না। এটার বিরোধিতা করার তো আমি কোনো কারণ দেখতেছি না।’
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা বলি, সচিবালয়ে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা আছে। তো তাইলে এরা কারা? এরা হচ্ছে তারা যারা স্বৈরাচার মেরিটকে বাদ দিয়ে স্লিপের মাধ্যমে লিস্টের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে, তারা। এরপরে যদি আমরা আবার সে পদ্ধতিতেই নিয়োগ দেই তাহলে তো প্রেতাত্মা এখন ঘুরতেছে। তা হলে আমরা কি সারাক্ষণ প্রেতাত্মার আওতায় থাকব? এ জন্য আমরা চাচ্ছি, প্রেতাত্মাকে দূর করতে। দোয়া দরুদ সুরা টুরা যা পড়া দরকার পড়ে পেতাত্মাহীন একটি উন্নত সচিবালয়, উন্নত সরকারি কর্মকর্তা যে দেশকে ভালোবাসে, যোগ্যতার ভিত্তিতে আসবে— এটা নিশ্চিত করা দরকার। সে জন্যে অধিকাংশ দল এই মতের পক্ষে চূড়ান্তভাবে একমত।’