মিরপুরের আত্মবিশ্বাস কতটা কাজে দেবে লিটনদের


টানা দুটি সিরিজ জয়; শ্রীলঙ্কার পর এবার পাকিস্তান। দুই সিরিজ মিলিয়ে চার ম্যাচে জয়। এই ধারাবাহিক সাফল্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বাংলাদেশ দলের, এই কথা বলছেন অধিনায়ক লিটন দাসসহ দলের অন্য সদস্যরা। তবে এই আত্মবিশ্বাস কতটা কাজে দেবে দলের এবং এটা কি সত্যি না কৃত্রিম, এ নিয়ে যখন আলোচনা, তখন লিটনদের সামনে দীর্ঘ এক ক্রিকেট বিরতি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টির পরদিনই বাংলাদেশ দলের বিদেশি কোচিং স্টাফরা ফিরে গেছেন নিজ নিজ দেশে। ক্রিকেট দলের অনেক সদস্য ছুটি কাটাতে দেশ ছেড়েছেন।
সামনে এশিয়া কাপ। তার আগে প্রায় এক মাস ফাঁকা সময়। সবকিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হবে এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত এই টুর্নামেন্ট। এই সময়ের ব্যবধানে টানা দুটি সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হোম সিরিজটি এই বছরের আগস্ট থেকে পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে। তাই এশিয়া কাপের আগে অখণ্ড অবসর লিটনদের। এ সময় অবশ্য অন্যান্য দল ব্যস্ত থাকবে আন্তর্জাতিক সিরিজে। ব্যতিক্রম শুধু আয়ারল্যান্ড। তাদেরও আগস্টে কোনো সিরিজ নেই। ভারতের আসা পিছিয়ে যাওয়ায় বিসিবির পরিকল্পনা ছিল ক্রিকেটারদের বিশ্রামে রাখা। তবে সাম্প্রতিক সিরিজ জয়ের সাফল্য, আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার তাগিদ ও এশিয়া কাপে ভালো প্রস্তুতির দিকটি মাথায় রেখে এখন একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার চিন্তাভাবনা বিসিবির। সম্ভাব্য ভেন্যু সংযুক্ত আরব আমিরাত। আয়োজক দেশ আরব আমিরাত ও আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিসিবি। সবকিছু ঠিক থাকলে দ্রুত সময়ে এই টুর্নামেন্টের সূচি ঘোষণা করতে পারে বিসিবি।
বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার কাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, এশিয়া কাপে ভালো করার জন্য প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলা জরুরি। তাঁর ভাষায়, ‘দুটি সিরিজ জিতে দারুণ লাগছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে এখন ছক্কা মারার সামর্থ্য দেখা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় উইকেট ভালো ছিল। মিরপুরে এই সময়ে ভালো উইকেট পাওয়া কঠিন। তবে বিপিএলে দেখেছি, মিরপুরেও ১৮০-২০০ রানের ম্যাচ হয়েছে। বড় রান সফলভাবে তাড়া করার ঘটনাও ঘটেছে।’
বাস্তবতা হলো, এশিয়া কাপে খেলা হবে ভিন্ন কন্ডিশনে। হাবিবুলের মতে, ‘জয়ের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলনা চলে না। সেটা আসল হোক কিংবা কাগজ-কলমে, তা কাজে লাগে ম্যাচ খেলতে গেলে। আমি মনে করি, সত্যিই দলের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সেটা না থাকলে টানা চার ম্যাচ জেতা যায় না।’
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে হাবিবুল বাশার আরও বললেন, ‘সেবার বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ঘরের মাঠে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে স্পিনিং উইকেটে সিরিজ জিতে পাওয়া আত্মবিশ্বাস কাজে আসেনি। তবে এবার দলের আত্মবিশ্বাসটা আলাদা। যদি এই সময়ে আমরা সঠিক কন্ডিশনে কিছু ম্যাচ খেলতে পারি, খুব ভালো হয়।’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটের মুখেও একই কথা। তিনি বলেন, ‘এই বর্ষাকালে উইকেট কখনো ২০০ রানের হবে না। মাটির অবস্থা নরম, ইনফিলট্রেশন কম। তাই ১৩০-১৪০ রানের মধ্যেই খেলা গড়াবে। তবে আইসিসির বড় ইভেন্টে ভালো করতে হলে মিরপুরের উইকেটে খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে না, বরং উন্নত কন্ডিশনে খেলা জরুরি।’
পাইলটের যুক্তি, ‘বিশ্ব ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি এখন ২৫০ রানের খেলা হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এমন উইকেট নেই। পাকিস্তান এখানে এসে বিপদে পড়েছিল। কারণ, তারা ব্যাটিং বান্ধব কন্ডিশনে খেলে অভ্যস্ত। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের কন্ডিশনে খেলার কৌশল কাজে লাগিয়েছে। আসল চ্যালেঞ্জ এখন সামনে।’
পাইলটের কাছে আত্মবিশ্বাস হলো, যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখা। তাঁর ভাষায়, ‘এই বিশ্বাস যদি দীর্ঘ মেয়াদে থেকে যায়, তবে তা কাজে দেবে। নইলে শুধু জয় দিয়ে তৈরি আত্মবিশ্বাস কাজে আসবে না।’