সড়কে বাজার, নেপথ্যে ‘চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট’


ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি এখন কার্যত একটি অবৈধ বাজারে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান। এসব দোকানে প্রতিনিয়ত চলছে ফলমূল ও কাঁচামাল বিক্রি। এতে জনসাধারণ ও যানবাহনের চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগ। এর আড়ালে সক্রিয় রয়েছে চাঁদাবাজির চক্র।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের জায়গায় দোকান বসাতে ব্যবসায়ীদের এককালীন ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এরপর প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয় ২০-৫০ টাকা। এই চাঁদাবাজির নেতৃত্বে রয়েছেন পৌর বাজার ইজারাদার শহীদ মিয়া। দোকানিরা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের লোকদেখানো উচ্ছেদ অভিযান হলেও মূল সিন্ডিকেট থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এক দোকানি বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানের কিছুদিন পর আবার শহীদের লোকজন এসে বসতে বলে।’
প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও প্রভাবশালী চক্রের যোগসাজশে একটি মহাসড়ক বাজারে পরিণত হয়েছে। সড়কজুড়ে এমন অবৈধ বাজার স্থাপন শুধু জনভোগান্তি নয়; বরং বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণও হতে পারে বলে শঙ্কা এলাকাবাসীর। তাঁরা বলছেন, এই অবস্থার দ্রুত অবসান না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
সচেতন মহলের দাবি, যেখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় থাকা মহাসড়কে কোনো ইজারা না থাকার কথা, সেখানে বছরের পর বছর কীভাবে চাঁদা আদায় করা হয়? প্রশাসনের নীরব ভূমিকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এ চক্র বেপরোয়াভাবে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে নজরুল কলেজ মার্কেটের রাজধানী হোটেলের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব অবৈধ দোকানের কারণে পদচারী-সেতু ব্যবহার করতে গিয়ে গাদাগাদির কারণে এখানে নিয়মিত চুরি-ছিনতাই হচ্ছে। অনেক সময় নারীরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন। প্রশাসন চাইলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব সময়ের জন্য এখানে যদি আনসার বা পুলিশ নিয়োগ করে, তবে আমরা বৈধ ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনে মাসে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেব।’
এক বৃদ্ধ দোকানি বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে এখানে দোকান করতে দেখছি। কেউই আমাদের ওঠাতে পারেনি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর বাজার ইজারাদার শহীদ মিয়া দাবি করেন, তিনি মহাসড়ক ইজারা নিয়েছেন। তবে পরে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কিছু টাকা নিই। জায়গা কোন কর্তৃপক্ষের আওতায় তা সঠিক জানি না। পৌর প্রশাসক জানেন।’
এ বিষয়ে ত্রিশাল পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, ‘মহাসড়ক ইজারার আওতায় নয়। আমি শহীদকে কয়েকবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, সে দায় স্বীকার করেনি। আমরা দ্রুতই অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করব।’