শিরোনাম
শেরপুর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন স্থগিতের আদেশ আদালতেরঅটোরিকশায় চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকবিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা অনুমোদনগৃহহীনদের উচ্ছেদে নাছোড়বান্দা ট্রাম্প, ন্যাশনাল গার্ড–এফবিআই নামাচ্ছেন সড়কেসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছাবে মডেল মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টাজোটবদ্ধ নির্বাচনেও থাকবে দলীয় প্রতীক৩২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে চীনের লেসো গ্রুপ, সাড়ে ১২ একর জমি হস্তান্তরআরও ৪৮৮ কোটি বিনিয়োগ করবে চীনা খাইশি গ্রুপ

পাহাড়ে মুখী কচু চাষে ঝুঁকছেন মানুষ

পাহাড়ে মুখী কচু চাষে ঝুঁকছেন মানুষ

খাগড়াছড়ির দক্ষিণাঞ্চলের গহীন অরণ্যে দিন দিন বাড়ছে মুখী কচুর চাষ। টিলা পাহাড়ের অনাবাদি জমিতে এই ফসল চাষ করে পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন বছরজুড়ে। লাভজনক হওয়ায় এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে গিয়ে কচু চাষ করছেন চাষিরা। তবে একই জমিতে পরপর মুখী কচু চাষে ফলন ভালো না হওয়ায় চাষের জন্য নতুন টিলা খুঁজতে হচ্ছে তাঁদের।

চাষিরা জানাচ্ছেন, এই চাষে একদিকে যেমন প্রচুর শ্রম প্রয়োজন, তেমনি আর্থিক ঝুঁকিও আছে। একাধিক সশস্ত্র সংগঠনের চাঁদার ভয় ও বাজারে সারের সংকট থাকায় অনেকে মুখ খুলতে চান না।

চাষিরা বলেন, মুখী কচু চাষে একদিকে আয় বাড়ছে, অন্যদিকে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে নতুন টিলা প্রস্তুত করতে হচ্ছে। কচু লাগানোর উপযুক্ত সময় চৈত্র মাস। এরপর বৃষ্টিপাত হলেই বীজ গজায়, তখন শুরু হয় খেত পরিচর্যার কাজ। আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফসল সংগ্রহ শুরু হয়।

মানিকছড়ি উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে উপজেলায় ৭৮ হেক্টর জমিতে কচু চাষ হয়। এবারে চাষের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, পুরো দক্ষিণাঞ্চলে (মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মহালছড়ি, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি) গতবার প্রায় ৫০০ হেক্টর টিলায় কচু চাষ হয়।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গহীন অরণ্যে কয়েকটি পাহাড়ে মুখী কচুর খেতে গাছের গোড়ায় সার দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার সকালে তোলা। ছভি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গহীন অরণ্যে কয়েকটি পাহাড়ে মুখী কচুর খেতে গাছের গোড়ায় সার দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার সকালে তোলা। ছভি: আজকের পত্রিকা

চাষি রাজু বলেন, মুখী কচু পরিশ্রমসাধ্য ও প্রকৃতিনির্ভর ফসল। অনাবাদি জমিতে এটি ভালো হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মুখী কচু চাষে ভাগ্য বদলায় অনেকের। তবে বর্তমানে সারের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি জানান, ৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপি সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১,৩৫০ টাকা হলেও অনেককে কিনতে হয়েছে ১,৭০০ থেকে ১,৮০০ টাকায়।

শ্রমিক আবদুল করিম বলেন, ‘কচু খেতে সারাবছর কাজ থাকে। ভালো মজুরি মেলে। নারী-পুরুষ মিলেই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা যায়।’

শ্রমিক মংশে মারমা বলেন, ‘এই কাজ না থাকলে আমাদের পাহাড়ি জনপদে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যেত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চাষি জানান, কচু চাষে সবাই সফল হন না। একই জমিতে পরপর কচু চাষে ফলন কমে যায়। তাই তাঁরা এক-দুই বছর জমি অনাবাদি রেখে পরবর্তী চাষ করেন। কেউ কেউ বনজঙ্গল পরিষ্কার করে নতুন টিলা তৈরি করেন।

তাঁরা আরও বলেন, কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠনকে বাধ্যতামূলক বার্ষিক চাঁদা দিতে হয়। এ কারণে লাভ-লোকসান, আবাদি জমির পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য অনেক সময় গোপন রাখতে হয়।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গহীন অরণ্যে কয়েকটি পাহাড়ে মুখী কচুর খেতে গাছের গোড়ায় সার দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার সকালে তোলা। ছভি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গহীন অরণ্যে কয়েকটি পাহাড়ে মুখী কচুর খেতে গাছের গোড়ায় সার দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার সকালে তোলা। ছভি: আজকের পত্রিকা

চাষিরা জানান, মুখী কচুর গাছের গোড়ায় এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে টিএসপি সার দিতে হয়। প্রতি ৪০ শতকে ১৫০–২০০ কেজি টিএসপি ব্যবহার করতে হয়। ফলে সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দেয়।

মানিকছড়ি ফার্টিলাইজার সমিতির সভাপতি এস.এম. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভারী বর্ষণের কারণে সাগর থেকে জাহাজে করে সার আনলোডে সমস্যা হয়েছিল। এখন সংকট কেটে গেছে।’ তিনি বলেন, মানিকছড়িতে চাহিদা বেশি হলেও অন্য উপজেলা থেকে এসে এখান থেকেই সার কেনে চাষিরা, তাই সরবরাহে চাপ পড়ে।

মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান বলেন, ‘গতবার ৭৮ হেক্টর জমিতে কচু চাষ হয়েছিল, এবার সেটি আরও বাড়বে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি বা খরার প্রভাব না পড়লে কচু লাভজনক ফসল। সার সংকট এখন নেই।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button