নোয়াখালীর হাতিয়ায় মেঘনা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ স্পিডবোট


নোয়াখালী হাতিয়ার বাসিন্দা মোক্তাদির রাহিম জনি বোনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য উঠেছিলেন যাত্রীবাহী স্পিডবোটে। বোটটি ২৮ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দিয়ে মেঘনা নদীর মাঝে এসে হঠাৎ তলা ফেটে পানি ঢুকতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। জীবন বাঁচাতে যাত্রীরা নিজেদের জামাকাপড় দিয়ে ফাটা অংশ চেপে ধরে। সেই সঙ্গে চালক স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বোটটিকে তীরের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। পরে যাত্রীরা দ্রুত নেমে গিয়ে জীবন বাঁচায়। কিন্তু অনেকের ব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যায়।
আজকের পত্রিকার এই প্রতিনিধিকে ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলেন জনি। তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর চালকের কাছ থেকে বোটের মালিকের মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে কল দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও ত্রুটিপূর্ণ বোট চালানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি উল্টো উত্তেজিত হয়ে বলেন, সবাইকে কৈফিয়ত দিতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্পিডবোটটির মালিক মো. পিটু। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে এবং এই সুযোগে বোট পরিচালনায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। তবে যোগাযোগ করা হলে পিটু যাত্রীদের সঙ্গে উত্তেজিত আচরণ করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ঘটনাটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা ছিল। এতে অতিরিক্ত যাত্রী থাকার বিষয়টি চালক থাকে জানাননি।
হাতিয়ার নলচিরা-চেয়ারম্যান ঘাট নৌপথে যাত্রী পারাপারে এমন প্রায় ৭০টি স্পিডবোট রয়েছে। ৫ আগস্ট ক্ষমতা বদলের পর যে যাঁর মতো করে এসব নৌযান নামিয়েছেন। এগুলোর অধিকাংশের নেই ফিটনেস ও যাত্রী বহনের অনুমোদন।
ঘাট সূত্রে জানা গেছে, স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনে সিরিয়াল দেওয়ার জন্য দুই ঘাটে লাইনম্যান নিয়োগ করা আছে। তাঁরা প্রতিটি বোট থেকে প্রতি যাত্রার জন্য নেন ১০০ টাকা। তাঁদের মধ্যে আবার সিন্ডিকেট আছে; যারা অর্থের বিনিময়ে ফিটনেসবিহীন স্পিডবোটের সিরিয়াল দিতে সহযোগিতা করে। অনেক সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহনে চালকদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের সমঝোতা থাকে। আবার স্থানীয় নেতাদের খুশি করতে তাঁদের ত্রুটিপূর্ণ বোটেও যাত্রী বহনে সুযোগ করে দেন লাইনম্যানরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক যাত্রীর অভিযোগ, এসব ত্রুটিপূর্ণ স্পিডবোটের মালিক বিএনপির নেতা-কর্মী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন। তাঁরা প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে এসব নৌযানে যাত্রী পারাপারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করছেন। ফলে প্রতিদিনই যাত্রী নিয়ে মাঝনদীতে এগুলো বিকল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে।
নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে দেব। তারা কোন স্পিডবোট চলবে, কোনটা কতজন যাত্রী বহন করতে পারবে—এসব ঠিক করে দেবে। মো. আলা উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
যাত্রীদের অভিযোগ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এসব বোটের মালিকেরা একটি কমিটি করেছেন। এতে সভাপতি করা হয় জাকের হোসেন কালু নামের একজনকে। তিনি জানান, নতুন কমিটির কাছে এখনো সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ঘাটের লাইনম্যানরা আগে থেকে বেপরোয়া। তাঁরা কারও কথা শোনেন না।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলা উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সম্প্রতি একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে ২৮ জন যাত্রী। এই রুটে অবৈধ স্পিডবোটের চলাচল বন্ধ করতে আমরা নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে দেব। তারা কোন স্পিডবোট চলবে, কোনটা চলবে না, আবার কোনটা কতজন যাত্রী বহন করতে পারবে—এসব ঠিক করে দেবে।’