শিরোনাম

কালো ধোঁয়ায় পুড়ছে ফসল, মরছে মাছ

কালো ধোঁয়ায় পুড়ছে ফসল, মরছে মাছ

একটি অ্যাসফল্ট মিক্সিং প্ল্যান্ট নিয়ে ছয় বছর ধরে ভুগছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের মানুষ। প্ল্যান্টের কালো ধোঁয়ার কারণে আশপাশের মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে পুকুরের মাছ। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও সমস্যা হচ্ছে মানুষের। অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে। উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও মেলেনি প্রতিকার।

ছয় বছর আগে গোদাগাড়ীর সাধুর মোড়-কাঁকনহাট সড়ক সংস্কার কাজের সময় পাহাড়পুর গ্রামের রাস্তার পাশেই অ্যাসফল্ট মিক্সিং প্ল্যান্টটি বসান বাগেরহাটের এক ব্যক্তি। অনেক আগেই রাস্তাটির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু মিক্সিং প্ল্যান্টটি থেকেই গেছে। এখন আশপাশের যত রাস্তার কাজ হয়, সব রাস্তারই পাথর, ডাস্ট ও বিটুমিনের মিক্সিং করা হয় এ প্ল্যান্টে। এই প্ল্যান্টের চিমনির উচ্চতা খুবই কম। ফলে কালো ধোঁয়ার প্রভাব পড়ছে অনেক বেশি।

গত মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের পাশেই অ্যাসফল্ট মিক্সিং প্ল্যান্টটি চলছে। এর কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। এই প্রতিবেদক সেখানে অবস্থান করার সময়ই প্ল্যান্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। শামসুর রহমান সুজন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কর্মচারী পরিচয় দিয়ে জানান, আশপাশের এলাকায় ঠিকাদারদের যেসব রাস্তার কাজ হয় তার সবখানেই এখান থেকে পাথর ও বিটুমিনের মিশ্রণ করে নেওয়া হয়। তবে চিমনির উচ্চতা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

গ্রামের একটি পুকুরে গিয়ে দেখা গেছে, পানিতে তেলের মতো কালি ভাসছে। পুকুর থেকে ভাসমান কালি তুলে এনে দেখালেন পুকুরের পাহারাদার আব্দুল হাসিম। তিনি বলেন, ‘এসব কালি চিমনি থেকে উড়ে এসে পড়ে। এতে তিন মাস আগেই আমাদের পুকুরের পাঁচ লাখ টাকার মাছ মারা গেছে। ইউএনওর কাছে আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসন যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। তা না হলে আমরা মইরে শেষ হয়ে যাব ছেইলে-পিলে লিয়্যা।’

কালো ধোঁয়ার কারণে চার লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। পানির ওপরে এক-দেড় আঙুল কালি জমে আছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্ল্যান্ট চলে, বাড়িতে থাকতে পারি না। গন্ধে ভাত খেতে পারি না।মেসবাউল হক,স্থানীয় মাছচাষি

গ্রামের মাছচাষি মেসবাউল হক বলেন, ‘কালো ধোঁয়ার কারণে আমার পুকুরে অক্সিজেন কমে গিয়ে চার লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। পানির ওপরে এখনো এক-দেড় আঙুল কালি জমে আছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্ল্যান্ট চলে। আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না। গন্ধে ভাত খেতে পারি না।’

প্ল্যান্টের মালিককে সেখানে পাওয়া যায়নি। প্ল্যান্টের অপারেটর আবদুল আউয়াল বলেন, ‘সব প্ল্যান্টেরই চিমনি এ রকমই কম উচ্চতায় থাকে। বরং আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর একটু উঁচু করে দিয়েছি যাতে এলাকার লোকের ক্ষতি না হয়। তারপর তো কেউ কিছু বলেনি।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মুনছুর রহমানকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘প্ল্যান্টের এই সমস্যার কথা আমি স্থানীয়দের কাছে শুনেছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়, কিংবা আমার হোয়াটসঅ্যাপেও ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়, তাহলে আমি গিয়ে দেখব। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button