কর্মকর্তার নিয়মের ফাঁদে ভোগান্তি দরিদ্রদের


ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) সুবিধাভোগী আজনুর আক্তার। দুই দিন ধরে ইউপি কার্যালয়ে ঘুরছেন ৫ মাসের বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলনের জন্য। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বেড়াজালে পড়ে অসহায় তিনি।
গতকাল বিকেলে ইউপি কার্যালয়ের সামনে আজনুর আক্তার জানান, নতুন নিয়মে সুবিধাভোগীর তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও চাল উত্তোলনে নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভেরিফিকেশন কপি দরকার। এই কপি তুলতে নির্ধারিত ফিসহ যাতায়াত এবং কম্পিউটার থেকে আবেদন সংগ্রহ করতে প্রায় ৩০০ টাকা খরচ। এ টাকা ছিল না তাঁর কাছে।
দুই দিন ঘোরার পর গতকাল সকালে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা টাকা ধার নেওয়ার পর নির্বাচন অফিস থেকে ভেরিফিকেশন কপি তুলে চাল উত্তোলন করেছেন। অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে আজনুর বলেন, ‘যদি ৩০০ টাকা খরচ করার ক্ষমতা থাকত, তাহলে সরকারের সহায়তার চাল না নিয়ে ওই টাকা দিয়ে চাল কিনে খেতে পারতাম। এখন চাল বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করতে হবে।’
শুধু আজনুর আক্তার নন, তাঁর মতো ইউপি কার্যালয়ে এসে এমন ভোগান্তি আর অতিরিক্ত খরচের বেড়াজালে পড়েছেন দুওসুও ইউনিয়নের ভিডব্লিউবির সুবিধাভোগী তাহেরা বেগম, লাইলী, লাভলী আক্তারসহ শতাধিক সুবিধাভোগী। সবার অভিযোগ, বরাদ্দের চাল ইউপি কার্যালয়ে রেখে এমনিতে ২ মাস পর বিতরণ করছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে সুবিধাভোগীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুওসুও ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি সুবিধাভোগীদের চাল বিতরণ করছেন ইউপি সচিব রফিকুল ইসলাম। কথা বলে জানা গেল, ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫ মাসের ১৫০ কেজি চাল তুলতে যাঁদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশন কপি আনতে বলা হচ্ছে। এই কপি ছাড়া কাউকে চাল দেওয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে দুওসুও ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই ইউপিতে কর্মরত থাকার কারণে রাজত্ব কায়েম করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আমরা ইউপি সদস্যরাও তার কাছে দাম পাই না।’
সরকারিভাবে এমন নিয়ম না থাকলেও কেন এমন নিয়ম করা হয়েছে জানতে চাইলে দুওসুও ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই নিয়ম আমরা করেছি। এতে সরকারি রাজস্ব আদায় হচ্ছে। তাহলে অসুবিধা কোথায়।’ তবে দুস্থদের কাছে ৩০০ টাকা অনেক টাকা কি না বা এমন নিয়ম কি তিনি করতে পারেন, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি।
ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ তদন্ত করা হবে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উপজেলা প্রশাসন।’