অনলাইন জুয়া বন্ধে হচ্ছে নতুন আইন


ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি, নৌকাবাইচের মতো অনুমোদিত খেলায় আর্থিক ঝুঁকি তৈরি হলে সেগুলোকে জুয়া হিসেবে গণ্য করা হবে। এ জন্য দুই বছর কারাদণ্ড, ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। জুয়া নিয়ে ফেসবুকে প্রচার করলেও দেওয়া হবে জেল-জরিমানা। অফলাইন ও অনলাইনে জুয়া খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (যাচাই) শেষে জুয়া প্রতিরোধ অধ্যাদেশের খসড়া পাসের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ‘বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’ সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে এই আইন হালনাগাদ করে নতুন আইন করতে জননিরাপত্তা বিভাগ ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে জুয়া প্রতিরোধ আইনের খসড়া করে। খসড়ার ওপর ২০টি সুপারিশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব সুপারিশের আলোকে জননিরাপত্তা বিভাগ খসড়াটি পরিমার্জন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আন্তমন্ত্রণালয় কমিটিতে পাঠায়। এই কমিটি গত ২১ এপ্রিল পর্যালোচনা সভা করে খসড়াটি চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
দূরবর্তী ও অনলাইন জুয়ার বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, ইন্টারনেট, টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও বা যোগাযোগের সুবিধার্থে অন্য যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক বা অন্যান্য প্রযুক্তির দূরবর্তী যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি জুয়ায় অংশগ্রহণ করলে এবং কাউকে এসবে অংশ নিতে প্রলুব্ধ বা সহযোগিতা করলে তা অপরাধ হবে। অনলাইন বেটিং অ্যাপস ও অনলাইন বেটিং সাইট ব্যবহার করলেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ বা অন্য কোনো অনলাইন, ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে খেলাধুলা বা এ-সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে বাজি ধরেন বা বাজি ধরার জন্য নগদ বা ক্যাশবিহীন ব্যাংকিং লেনদেন বা বিট কয়েনসহ অন্য যেকোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অন্য কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন করেন অথবা নিজে বা অন্যের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে অনলাইন বেটিং সাইট অথবা অ্যাকাউন্টে নিবন্ধন, হোস্টিং প্রদান, জুয়ার এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন, মাসিক ভাড়া বা অন্য কোনো প্রতিশ্রুতিতে দেশে বা বিদেশে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন, তবে তা অপরাধ হবে।
বাজি বা পণকে জুয়া হিসেবে গণ্য করে খসড়ায় বলা হয়েছে, যেকোনো খেলা বা কোনো বিষয়ের ফল সম্পর্কে আগে থেকে অভিমত জ্ঞাপন করে প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য বা প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থ, পণ্য বা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ওপর বাজি ধরলে, তা অপরাধ হয়েছে গণ্য হবে। এ জন্য তিন বছর জেল, ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। কেউ বাজিকর হিসেবে কাজ করলে দুই বছর কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। পাতানো খেলার জন্য তিন বছর জেল, ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং স্পট ফিক্সিং করলে দুই বছরের জেল, ২ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসে এই অধ্যাদেশের অধীনে অপরাধ করেন, তিনি অপরাধটি বাংলাদেশে করেছেন ধরে নিয়ে তাঁকে সাজা দেওয়া হবে। কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো ডিভাইস বা অনলাইনের সাহায্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এই অধ্যাদেশের অধীনে অপরাধ করলে তাঁকেও সাজা দেওয়া হবে।
এই অধ্যাদেশের অধীনে কেউ একই অপরাধ পুনরায় করলে এই অধ্যাদেশে সর্বোচ্চ যে দণ্ড রয়েছে তার দ্বিগুণ পর্যন্ত দণ্ড দেওয়া যাবে। এই অধ্যাদেশের অপরাধের সাজা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জুয়া প্রতিরোধ অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষ না হওয়ায় এ বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা নাম-পরিচয় প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জুয়া খেলার ধরনও পাল্টেছে। ফলে অনলাইন ও অফলাইনে জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন আইন করে সেখানে জেল-জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। অধ্যাদেশটি পাস হলে যেকোনো পরিসরে জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সহজ হবে।