শিরোনাম

সাত মাস ধরে ওষুধ নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, সেবা ব্যাহত

সাত মাস ধরে ওষুধ নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, সেবা ব্যাহত

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ ও জনবলসংকট দেখা দিয়েছে। এতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে পরিবার পরিকল্পনা-সংশ্লিষ্ট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার সাধারণ মানুষ; বিশেষ করে নারী ও কিশোরীরা।

জানা গেছে, ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত খানসামা উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। এসব মানুষের সেবায় এই উপজেলায় একটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং তিনটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোতে সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, প্রসবপূর্ব সেবা, প্রসবকালীন সেবা, নবজাতকের পরিচর্যা, ০ থেকে ৫ বছরের শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা কার্যক্রমসহ ২৫ রকমের ওষুধ বিনা মূল্যে সরবরাহ করার কথা। কিন্তু জনবল ও ওষুধ সংকটে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে জনবলসংকট রয়েছে। যাঁরা কর্মরত রয়েছেন, তাঁরাও অতিরিক্ত কাজের চাপে পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেন না। এর মধ্যে গত সাত মাস ওষুধ সরবরাহ না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে চিকিৎসাসেবা। প্রয়োজনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী এবং ওষুধের ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্য সহকারীরাও সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খানসামা ১০ শয্যা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৩টি, সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। এখানে ২ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও উভয় পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ফলে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনো রকমে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আলট্রাসনোগ্রাম সেবা বন্ধ থাকায় গর্ভবতী নারীরা বিপাকে পড়েছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে একজন কর্মরত থাকলেও যন্ত্রপাতি না থাকায় প্যাথলজি সেবা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এতে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে সেবা নিতে গিয়ে রোগীদের বাড়তি খরচ গুনতে হয়।

অন্যদিকে ভেড়ভেড়ী পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে ৫ পদের বিপরীতে কর্মরত ২ জন, খামারপাড়ায় ৫ পদের বিপরীতে ৩ জন এবং গোয়ালডিহি মডেল পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে ৯ পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৪ জন কর্মী। নিরাপদ প্রসবের জন্য ৪ মিডওয়াইফের পদ থাকলেও কর্মরতের সংখ্যা শূন্য।

খানসামা ১০ শয্যা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা গোবিন্দপুর গ্রামের হোসনেয়ারা বেগম, সুফিয়া খাতুনসহ একাধিক নারী বলেন, ‘ডাক্তার নাই, ওষুধও পাওয়া যায় না—তাহলে এই হাসপাতাল চালু রেখে কী লাভ।’

মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটির ফার্মাসিস্ট ফারজানা মলি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রায় ৭ মাস ধরে এখানে ওষুধ সরবরাহ নেই।’

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘ওষুধ না পেয়ে রোগী ও রোগীর স্বজনেরা আমাদের ওপর প্রায়ই ক্ষিপ্ত হচ্ছেন।’

খানসামা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) হাফিজুর রহমান হারুন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল এবং ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। ওষুধ সরবরাহের বিষয়টি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে সাময়িক জটিলতার কারণে বন্ধ রয়েছে। আশা করছি, জুলাই মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।’

ইউএনও কামরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অবহিত করব।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button