আইসিসিকে সহযোগিতা করায় তিন মানবাধিকার সংগঠনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা


ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত, গ্রেপ্তার, আটক বা বিচারের উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত—আইসিসিকে সহযোগিতা করায় তিন ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। সংগঠন তিনটি হলো—আল-হক, ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (পিসিএইচআর) এবং আল-মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস।
কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস অ্যান্ড ব্লকড পারসনস লিস্ট’ নামের বিশেষ এক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ওই তিন সংগঠনকে। মার্কো রুবিও ওই বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আইসিসির মধ্যে সার্বোভৌমত্ব অগ্রাহ্য করার প্রবণতা আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের মিত্রদের সেনা ও সার্বভৌমত্বকে আইসিসির এই প্রবণতা থেকে রক্ষা করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আর সেজন্যই এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাস্তি দিতে হবে। শাস্তি বাস্তবায়িত করতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্তে প্রমাণ সরবরাহ করছিল নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া সংগঠন তিনটি। এর আগে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্তের বিরুদ্ধে তদন্ত ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অভিযোগে আইসিসির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ট্রাম্পের প্রশাসন।
রামাল্লাহভিত্তিক আল-হক দীর্ঘদিন ধরে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলি নিপীড়নের বিরুদ্ধে জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে এবং বিভিন্ন দেশে মামলা পরিচালনা করছে। অন্যদিকে গাজা সিটিভিত্তিক ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এবং আল-মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে গাজার চলমান যুদ্ধের নথিপত্র সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আসছে।
এই তিন সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একে কঠোর ও দমনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তারা। বিবৃতিতে তারা বলে, ‘আমাদের জনগণের ওপর যখন গণহত্যা চলছে তখন মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞা কাপুরুষোচিত, অনৈতিক, অবৈধ ও গণতন্ত্রবিরোধী। কেবলমাত্র সেই রাষ্ট্রগুলোই এ ধরনের ভয়াবহ পদক্ষেপ নিতে পারে, যাদের আন্তর্জাতিক আইন ও মানবতার প্রতি কোনো সম্মান নেই।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত আইনজীবী এবং ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ (ডিএডব্লিউএন)-এর উপদেষ্টা মোহসিন ফারশনেশানি বলেন এই সংগঠন তিনটি ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী। ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘মার্কিন প্রশাসন সবসময়ই ইসরায়েলকে প্রাধান্য দেয় এবং ইসরায়েলি স্বার্থ নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন তা-ই করে। এটি লজ্জাজনক হলেও আশ্চর্যজনক নয়।’
গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র রামাল্লাহভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘আদ্দামীর’-এর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই সংগঠন ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। সে সময় সংগঠনটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সতর্ক করে বলেছিল—এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কর্মী, সেবা গ্রহীতা সম্প্রদায় ও সরবরাহকারীরা। একইসঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে এই নিষেধাজ্ঞা। এসময় ইসরায়েলি প্রশাসনের মন রাখতে মার্কিন প্রশাসন নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ তোলে তারা।
এছাড়া চলতি বছরের জুলাইয়ে ট্রাম্প প্রশাসন দখলকৃত পশ্চিম তীরের প্রশাসক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) এবং আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্বকারী প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকেও (পিএলও) নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে। একই সময়ে, ট্রাম্প প্রশাসন জো বাইডেন সরকারের আমলে অবৈধ বসতি ও সহিংসতায় অভিযুক্ত ইসরায়েলি সংগঠনগুলোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে।
ক্রাইম জোন ২৪