শিরোনাম
রাজনীতিতে আসার আগে যৌনকর্মী ছিলেন—ফিনিশ এমপির খোলামেলা স্বীকারোক্তিজনগণের বিশ্বাস থেকেও বিতাড়িত হয়েছে আ.লীগর‍্যাবের ধাওয়ায় পানিতে ডুবে মাদক কারবারির মৃত্যুবাঁকখালী নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা দেওয়ায় আরও এক মামলায় আসামি ১০০০শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের না রাখার চেষ্টা করা হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টাপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে আনা হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টারাবিতে শিবিরের প্যানেল থেকে নির্বাচন করবেন জুলাইয়ে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুবমনোনয়নপত্র দাখিল সমাপ্ত, রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ২৫৯ প্রার্থীমোহাম্মদপুরের বছিলায় দিনের বেলায় চাপাতি হাতে ছিনতাই, গ্রেপ্তার ১ধর্ষণের শিকার বিধবা, ছদ্মবেশে আসামি ধরলেন কনস্টেবল

ঢাকার আদাবরে কিশোর গ্যাংয়ের চাপাতি হামলায় পুলিশ আহত: ঘটনাস্থলে রক্ত, আতঙ্ক

ঢাকার আদাবরে কিশোর গ্যাংয়ের চাপাতি হামলায় পুলিশ আহত: ঘটনাস্থলে রক্ত, আতঙ্ক

অন্ধকার গলিতে হঠাৎ ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ চিৎকার। একপর্যায়ে দেখা গেল রক্তাক্ত এক ব্যক্তি। তিনি পুলিশ সদস্য। চাপাতির কোপে দিশেহারা হয়ে দৌড়াচ্ছিলেন।

ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর আদাবরের শ্যামলী হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়কে। প্রেমিক যুগলকে উদ্ধারের অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হন আদাবর থানার তিন পুলিশ সদস্য। গুরুতর আহত কনস্টেবল ও গাড়িচালক আল আমিনকে ভর্তি করা হয়েছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর)।

পরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালায়। আটক হয় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্যদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

শ্যামলী হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়কের ২১৫/১৬ নম্বর বাড়ি—তিনতলা ভবন। গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কসংলগ্ন বাড়িটির মালিক শহীদুল ইসলাম। কিন্তু তিনি সেখানে থাকেন না। বাড়িটির দেখাশোনা করেন মো. মিলন ও তাঁর স্ত্রী তাহমিনা বেগম। ৪৬টি ছোট কক্ষে নিম্ন আয়ের মানুষ ভাড়া থাকেন। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় মা-বাবার অনুপস্থিতিতে ষোড়শী এক তরুণী তার ছেলেবন্ধু পলাশের সঙ্গে কথা বলছিল। বিষয়টি টের পায় স্থানীয় কিশোর গ্যাং। তারা ঘরে ঢুকে তরুণ-তরুণীর ছবি তোলে, ভিডিও করে, তরুণীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে পলাশকে মারধর করে। পরে পলাশকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের আরেকটি তিনতলা ভবনের ছাদে। ভবনটির নিচতলায় রিকশার গ্যারেজ, যা কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানা হিসেবে পরিচিত। সেখানেই মাদকের কারবার, আড্ডা ও অস্ত্র মজুত থাকে।

গতকাল মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ভবনের মালিকানা স্থানীয় কাসেমের হলেও মালেক নামের এক ব্যক্তি ভাড়া নিয়ে সেখানে গ্যারেজ, দোকান ও বাসা তৈরি করেছেন। সামনেই আরেকটি তিনতলা ভবন রয়েছে মনির হোসেনের। তাঁরও গ্যারেজ। সেটা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার জন্য। সরু অন্ধকার গলিই মূলত কিশোর গ্যাংয়ের নিরাপদ এলাকা।

ভবনের নিচে ছোট্ট চায়ের দোকান চালান রিনা বেগম। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক কারবারও তিনি পরিচালনা করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রিনা বলেন, ‘আমি সাড়ে ৫ বছর ধরে শুধু চা বিক্রি করছি। ছেলেপেলেদের দৌড়াদৌড়ি দেখেছি। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না।’

পলাশকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন করলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আদাবর থানার এসআই ইব্রাহীম খলিল তিন পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা পলাশকে উদ্ধার করেন এবং অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করেন। কিন্তু থানায় ফেরার সময় স্থানীয় শহীদুলের বাড়ির সামনে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পুলিশের গাড়িতে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেয় এবং চাপাতি-সামুরাই দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

এ সময় গুরুতর আহত হন কনস্টেবল আল আমিন। তাঁর দুই সহকর্মী রায়হান ও নাজমুলও আহত হন। আতঙ্কে দোকানপাট মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যায়। আহত আল আমিন তখন চিৎকার করে বলছিলেন ‘বাঁচাও, বাঁচাও।’ তিনি দৌড়ে শহীদুলের বাড়ির নিচতলার লোকমানের ওষুধের দোকানে আশ্রয় নেন। সন্ত্রাসীরা সেখানে ঢুকেও হামলা চালায়, ভেঙে ফেলে দোকানের শাটার।

প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী বলেন, পুলিশ ছিল মাত্র তিনজন। সন্ত্রাসীর সংখ্যা ৫০-৬০ জন। সবার হাতে চাপাতি। পুলিশকে কুপিয়ে তারা দ্রুত বেড়িবাঁধের দিকে চলে যায়।

মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় ছোপ ছোপ রক্ত। এলাকায় আতঙ্ক। সব দোকানপাট বন্ধ। স্থানীয়রা মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছিলেন।

হামলার নেপথ্যে কারা

এসআই ইব্রাহীম খলিল জানান, হামলার নেতৃত্বে ছিল কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতা জনি ও রনি। সঙ্গে ছিল নাজির, ওসমান, দাঁতভাঙা সুজন, কবজিকাটা হৃদয় ও মাদক কারবারি রাজু। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

আদাবর থানার ওসি এস এম জাকারিয়া বলেন, পুলিশের ওপর হামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button