শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের না রাখার চেষ্টা করা হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা


সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। মন্ত্রণালয়ে আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে সচিবালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ২৯ জুলাই ‘প্রাথমিকে পাঠদান: বাইরের ২০ কাজের চাপে শিক্ষক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকা। নিজস্ব জরিপের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঠদানের বাইরেও অনেক কাজ করতে হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ অন্তত ২০ ধরনের কাজ করেন তাঁরা। সরকারি এসব কাজে শিক্ষকেরা বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, সরকারি হিসাবে দেশের সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও সত্যিকার অর্থে তা আরও কম হতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪ অনুযায়ী, দেশের সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘যেখানে আমাদের ঝরে পড়ার হার কমে যাচ্ছিল, হঠাৎ করে ঝরে পড়ার হার বেড়ে গেল। এটা একটা উদ্বেগের বিষয়। যে পরিসংখ্যান আছে, সেটি দেখাচ্ছে, আমাদের নিরক্ষরতার হার ২১ শতাংশের মতো। কিন্তু আপনি যদি গবেষণা করেন, তাহলে সত্যিকার অর্থে সাক্ষরতার হার আরও কম হতে পারে। এটা হচ্ছে আমার পর্যবেক্ষণ।’
সাধারণত সরকার নিজেদের প্রচারিত তথ্যের বিপরীতে যাওয়া তথ্য চেপে রাখার চেষ্টা করলেও অন্তর্বর্তী সরকার তা করছে না বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে সত্যটাকে ধামাচাপা দেওয়ার ইচ্ছা আমরা রাখি না। আমরা যা আছে, তা-ই বলতে চাই। কারণ, আমাদের উদ্দেশ্যটা ভালো।’
এদিকে প্রাথমিকের শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষকদের একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড। আমি মনে করি, এটা গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। কারণ, ২০১৪ সালে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণা করা হলো। কিন্তু তাদের তৃতীয় শ্রেণির আর্থিক সুবিধা কেটে দেওয়া হলো; কিন্তু তাদের বেতন বাড়ানো হলো না। তারা মামলা করে মামলা জিতেছে। কিন্তু আমাদের কোর্টের নিয়ম হচ্ছে, যে ৪৫ জন মামলা করেছে, তাদের দিতে হবে। কিন্তু সরকার মনে করছে, যেহেতু কোর্ট বলছে, তাই সবাই পেতে পারে। তাদের বড় একটা দাবি মিটল।’
সহকারী শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকের শতভাগ পদে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন বলে জানিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয় থেকেও আমরা তাই বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের যে সরকারি সিস্টেম, সেখানে ফিলোসফিটা হচ্ছে, সবার পদোন্নতি না দিয়ে নতুন কিছু ব্লাড নিয়ে আসা দরকার। ফলে আগে যেটা ৬৫ শতাংশ পদোন্নতি ও ৩৫ শতাংশ নতুন নিয়োগ, এখন যেটা হচ্ছে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি ও ২০ শতাংশ নতুন নিয়োগ।’
১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া সহকারী শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবি জানিয়েছিলেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এর সঙ্গে একমত। নতুন বেতন কমিশন হচ্ছে। আমরা তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। ফলে শিক্ষকদের আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার মতো কোনো ভ্যালিড পয়েন্ট নেই।’
ক্রাইম জোন ২৪