শিরোনাম
রাজধানীর খিলক্ষেতে মাইক্রোবাস থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে এসি বিস্ফোরণ, ৪ ঘণ্টা অচল ছিল সিগন্যাল লাইনখুলনায় কিল-ঘুষিতে নারীকে হত্যাশহীদ মিনারে বদরুদ্দীন উমরকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে জুলিয়াস সিজারের করা রিট খারিজনারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের সহকারী ইভনকে কুপিয়ে হত্যাছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি-জিএস প্রার্থীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবলড, অভিযোগ শিবিরেরওগাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ‘পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট করলে ভারতকে শাস্তি দিত আইসিসি’১৫ বছরে অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ: মির্জা ফখরুল

ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড আফগানিস্তান

আফগানিস্তানে গত রোববার মধ্যরাতে ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে, তখন ফরিদুল্লাহ ফাজলি কুনার নদীর তীরে আসাদাবাদে নিজের বাড়িতে গভীর ঘুমে ছিলেন। কম্পনে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি বলেন, ‘খুব শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিল, সঙ্গে খুব ভয়ংকর শব্দও হচ্ছিল। আমরা সকাল পর্যন্ত ঘুমাতে পারিনি। ভূমিকম্পের পর ছোট ছোট ঝাঁকুনি হচ্ছিল, এখনো হচ্ছে।’

শুধু ফাজলি নন। রোববার রাতে এমন উৎকণ্ঠা নিয়ে রাতযাপন করেছেন অনেকে। দেশটির পার্বত্য কুনার প্রদেশে রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই প্রদেশ পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী। ভূমিকম্পে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পর্যন্ত কেঁপে উঠেছে। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ভূমিকম্পে শুধু কুনারে ৬১০ এবং নানগারহারে আরও ১২ জন নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৮০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। প্রায় ১২ লাখ মানুষ এই ভূমিকম্পে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কয়েকটি গ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ

ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের বেশ কিছু গ্রাম ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। ওই সব এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তালেবান সরকার।

এদিকে গতকাল তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমিকম্পের প্রায় এক দিন পরও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঠিক কত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, তা কেউ জানেন না।

ভূমিকম্পে যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এর মধ্যে পাহাড়ি এলাকাগুলোর অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। এমন একটি পাহাড়ি এলাকার ফুটেজ প্রকাশ করেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এতে দেখা যায়, ভূমিকম্পের পর ভূমিধসে পাহাড়ি রাস্তাগুলো একেবারে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খাটিয়ায় করে আহত একজনকে নামাচ্ছেন কয়েকজন।

এদিকে কুনার প্রদেশের নুরগাল এলাকার এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানিয়েছেন, সেখানকার গ্রামগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ অবকাঠামো একেবারে ধসে গেছে। এই এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা যেতে পারছেন না।

হাসপাতালের চিত্র ভয়ানক

তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ হয়ে গেছে। এর বড় প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্য খাতের ওপর। ভূমিকম্পের পর সে চিত্র যেন প্রকাশ্যে এসেছে। অনেক হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। বর্তমানে কোথাও কোথাও রোগীর চাপ এত বেশি যে, পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

যেমন চিকিৎসক মুলাদাদের কথাই বলা যেতে পারে। তিনি কুনার প্রাদেশিক রাজধানী আসাদাবাদের প্রাদেশিক হাসপাতালের প্রধান। মুলাদাদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর পুরো রাত ঘুমাতে পারেননি, কারণ তাঁকে কর্মীদের নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। একের পর এক আহত রোগীর আসছেন চিকিৎসার জন্য। তিনি বলেন, প্রতি ৫ মিনিটে একজন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে ওই হাসপাতালে। পুরো হাসপাতাল আহত রোগীতে ভরে গেছে।

মুলাদাদ জানিয়েছেন, গত কয়েক ঘণ্টায় নারী-শিশুসহ ১৮৮ জন আহত মানুষ হাসপাতালে আনা হয়েছে। বেড ফুরিয়ে যাওয়ায় অনেককে মেঝেতে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এমন সংকটময় পরিস্থিতি তিনি কখনো কল্পনাও করেননি। তিনি হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তাঁর হাসপাতালে ৪টি লাশ আনা হয়েছে। ডজনখানেক লাশ অন্য স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই চিকিৎসক।

কুনার প্রদেশের পাশেই নানগারহার প্রদেশ। সেখানকার প্রধান হাসপাতালে প্রায় ২৫০ জন আহত ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কুনারের বাসিন্দা ফাজলি বলেন, এটা ছিল ভয়ংকর এক পরিস্থিতি, চারপাশে শুধু ভয় আর আতঙ্কের পরিবেশ।

নারীদের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ

তালেবান ক্ষমতায় আসা পর থেকেই নারীদের গৃহবন্দী করে ফেলা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গামী মেয়েরাও ঘরবন্দী এখন। ভূমিকম্পের পর নারীদের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকেরা। স্থানীয় এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জালালাবাদের প্রধান হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, বর্তমানে হাসপাতালে পুরুষ রোগীর সংখ্যা নারীর চেয়ে অনেক বেশি। ওই সাংবাদিকের মতে, কুনার অত্যন্ত রক্ষণশীল এলাকা। তাই সাংস্কৃতিক কারণে নারীদের হয়তো পরে চিকিৎসা দেওয়া হতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কিছু নারী হয়তো আহত হওয়ার পরও বাড়িতে থেকে গেছেন অথবা পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালে আসতে অপেক্ষা করছেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সরকার যা বলছে

আফগানিস্তানকে সাহায্য ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ ও জাপান। ইউনিসেফ জানিয়েছে, তারা ত্রাণ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত। এদিকে ত্রাণের বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছে তালেবান সরকারও। তবে তারা বলছে, আগে সেখানে উদ্ধার কাজে সাহায্য করা হোক।

এদিকে তালেবান সরকার এ সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি কমিটি গঠন করেছে। তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, হতাহত ব্যক্তিদের সাহায্যের জন্য ইতিমধ্যে তহবিল গঠন করা হয়েছে। উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এই তহবিলে প্রয়োজনে আরও অর্থ দেওয়া হবে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button