ব্যাংকে আস্থা কমে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে


মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুন মাসে হাতে রাখা নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা, যা মে মাসের তুলনায় ২ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যস্ফীতির চাপ এবং বিগত সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাওয়ায় নগদ অর্থ হাতে রাখার এই প্রবণতা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে মানুষের হাতে নগদ ছিল ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, এপ্রিল থেকে মে মাসে বৃদ্ধি ছিল ১৬ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে নগদ ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩১ কোটি ৯ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে কমে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৬ লাখ এবং মার্চে বেড়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৬ লাখ। এপ্রিল মাসে হ্রাস হয় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৬ কোটি ৯ লাখে, তারপর মে ও জুনে পুনরায় বৃদ্ধি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিগত সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম মানুষের আস্থা কমিয়েছে। আতঙ্কিত গ্রাহকেরা ব্যাংকে রাখা অর্থ তুলে বাসায় রাখার প্রবণতা দেখান, যার ফলে ব্যাংকগুলোয় চরম তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করলেও তা কার্যকর হয়নি। ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বেড়ে যাওয়াকে ‘মানুষের হাতে নগদ বৃদ্ধি’ হিসেবে ধরা হয়।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকা‘কে বলেন, ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়ে যাওয়া বা কমা নিয়মিত ঘটনা। নগদ চাহিদা বেড়ে গেলে গ্রাহকেরা ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন। মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ ও ক্ষুদ্র আমানতকারীর বাড়তি খরচ নগদ রাখার প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে। দুর্বল ব্যাংকের গ্রাহকও আস্থা কম থাকায় নগদ হাতে রাখছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে সরকারের পালাবদলের পর সেপ্টেম্বর থেকে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। গত বছরের আগস্টে মানুষের হাতে বা ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ, অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি ৭ লাখ, নভেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি ৭ লাখ এবং ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মন্তব্য করেন, ব্যাংক খাতের অস্থিরতার কারণে মানুষ নিজের কাছে নগদ রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এ প্রবণতা কমিয়ে আনতে হলে সবার আগে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি খরচ মেটাতেও নগদ তোলা হচ্ছে। সংকটাপন্ন ব্যাংকের গ্রাহকও আস্থা কম থাকার কারণে নগদ হাতে রাখছেন। এসব কারণে বাজারে মুদ্রা সরবরাহও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক্রাইম জোন ২৪