শিরোনাম

ভাঙা পায়ের চিকিৎসা শেষে ফেরার পথে সপরিবারের মৃত্যু

ভাঙা পায়ের চিকিৎসা শেষে ফেরার পথে সপরিবারের মৃত্যু

পা ভেঙে গিয়েছিল কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মো. ওমর আলীর (৭৫)। চিকিৎসার জন্য বেশ কিছুদিন ঢাকায় থাকতে হয় তাঁকে। কয়েক দিন আগে চিকিৎসকেরা ছাড়পত্র দেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফেরার সময় সবাই প্রাণ হারান সড়ক দুর্ঘটনায়।

আজ শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার ইউটার্নে ঘটে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা। ঢাকামুখী সিমেন্টবোঝাই কনটেইনারবাহী ট্রেলার পাশ কাটাতে গিয়ে ওমর আলীদের বহনকারী প্রাইভেট কার ও পাশের একটি অটোরিকশার ওপরে উল্টে পড়ে।

এতে নিহত হন ওমর আলী (৭৫), তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৫), বড় ছেলে আবুল হাশেম (৪৫) ও ছোট ছেলে আবুল কাশেম (৪০)। আবুল হাশেম ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। তিনি নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে স্বজন সূত্রে জানা গেছে। বরুড়ার হোসেনপুর গ্রামে আজ সন্ধ্যায় একসঙ্গে চারটি লাশ এসে পৌঁছায়।

এদিকে লরির চাপায় সিএনজিতে থাকা অন্তত তিনজন যাত্রী গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘প্রাইভেট কার চাপা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেতর থেকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু হয়। আমরা কয়েকজন দৌড়ে যাই। সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করেও সিমেন্টবোঝাই লরিটি সরাতে পারিনি। মিনিট দশেক পর ভেতরটা একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তখনই বুঝলাম, আর কেউ বেঁচে নেই।’

নিহত ওমর আলীর জামাতা দেলোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবা (শ্বশুর) অনেক দিন ধরে হাসপাতালে ছিলেন। পা ভাঙা ছিল, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় থাকতে হয়েছে। কয়েক দিন আগে ডাক্তারেরা সুস্থ ঘোষণা করেন। তখন তিনি খুব উচ্ছ্বসিত ছিলেন—কয়েক দিনের মধ্যে গ্রামে ফিরবেন। বলেছিলেন, অনেক দিন ধরে গ্রামের আলো-বাতাস থেকে দূরে আছি, একবার গ্রামে গিয়ে শান্তিতে নিশ্বাস নিতে চাই। আজ ফিরলেন বটে, তবে লাশ হয়ে।’

বরুড়ার হোসেনপুর গ্রামে আজ সন্ধ্যায় একসঙ্গে চারটি লাশ এসে পৌঁছায়। এ সময় স্বজন ও প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কুমিল্লা ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস গিয়ে দুটি রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত লরি (ট্রেলার), প্রাইভেট কার ও সিএনজি (অটোরিকশা) সরায়। নিহত চারজনের মরদেহ থানায় এনে আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button