এনবিআরে গণবদলি ও বরখাস্ত-আতঙ্ক


আন্দোলনের পর এনবিআরে অস্থিরতা তীব্র। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বরখাস্তের পাশাপাশি হঠাৎ বদলির আতঙ্কেও রয়েছেন। নিয়মিত বিরতিতে এখন পর্যন্ত ৩০-এর বেশি কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন। এ ছাড়াও বদলি ও গণবদলির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ ১৮ আগস্ট ৯ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং পরদিন একযোগে ৪১ অতিরিক্ত কর কমিশনার ও ১৩১ সহকারী কর কমিশনারের বদলির আদেশ জারি করা হয়।
গতকাল এনবিআরের কর প্রশাসন থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও এই বদলির আদেশে এসব কর্মকর্তার বিপরীতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে কর্মকর্তাদের অবিলম্বে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করেই এ ধরনের বরখাস্ত ও বদলির আদেশে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে, যা তাঁদের মনোবলে প্রভাব ফেলতে পারে এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বদলির আদেশ পাওয়া একজন অতিরিক্ত কমিশনার জানান, সাধারণ বদলি হলেও এটি আন্দোলনের পর হওয়ায় তা স্বাভাবিক বদলি হিসেবে গণ্য হচ্ছে না। অন্য একজন বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া মন্তব্য করেন, ‘বদলির ফলে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। প্রকৃতভাবে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত, অযথা টানাটানি করলে দেশের ক্ষতি হবে।’ এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে বদলির ঘটনা স্বাভাবিক। সবার সম্পদের হিসাব চাইলে দোষ কী? দুদকের তদন্ত স্বচ্ছভাবে হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
বদলির তালিকায় বিসিএস (কর) একাডেমির পরিচালক হাফিজ আল আসাদ ঢাকার কর অঞ্চল-২০-এর পরিদর্শী রেঞ্জ-১-এ, শেখ শামীম বুলবুল নরসিংদী কর অঞ্চলে, ছায়িদুজ্জামান ভুঞা নারায়ণগঞ্জ কর অঞ্চলে এবং বেগম হাসিনা আক্তার খান গাজীপুর কর অঞ্চলে পদস্থ হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, রাজশাহী ও দিনাজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলেও কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে। বড় করদাতা ইউনিট, কর পরিদর্শন অধিদপ্তর, এনবিআরের সিআইসি ও আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটেও দায়িত্বে পরিবর্তন হয়েছে।
সবশেষ এনবিআরের ৯ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিআইসি পরিচালক চাঁদ সুলতানা চৌধুরানী, আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সোহেলা সিদ্দিকা, ঢাকা কর অঞ্চল-৭-এর অতিরিক্ত কমিশনার সুলতানা হাবীব, সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু, মোংলা কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার আবুল আ’লা মোহাম্মদ আমীমুল ইহসান খান, চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির যুগ্ম কমিশনার মো. সানোয়ারুল কবির, ফরিদপুর কর অঞ্চলের যুগ্ম কমিশনার মো. মেজবাহ উদ্দিন খান, দিনাজপুরের কর অঞ্চলের পরিদর্শী রেঞ্জ-২-এর যুগ্ম কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া এবং খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
গত মে-জুনে এনবিআরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে আন্দোলন করেন। নতুন রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর দেড় মাস ধরে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে তাঁরা কাজবিরতি চালান। ২৮ ও ২৯ জুন দেশব্যাপী কাজ বন্ধ রাখার পর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার হলেও এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুরু হয়।
ক্রাইম জোন ২৪