অস্ট্রেলিয়ায় হত্যা মামলায় এআইভিত্তিক ভুয়া তথ্য উপস্থাপন, আইনজীবীর ক্ষমাপ্রার্থনা


অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে হত্যা মামলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইনির্ভর ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। রিশি নাথওয়ানি নামের এই আইনজীবী ‘কিংস কাউন্সেল’ মর্যাদাসম্পন্ন। আদালতে জমা দেওয়া তাঁর লিখিত উপস্থাপনায় ছিল মনগড়া উদ্ধৃতি ও সম্পূর্ণ কাল্পনিক মামলার রায়, যা তৈরি হয়েছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের মাধ্যমে।
বিষয়টি ধরা পড়ে ভিক্টোরিয়ার সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এক কিশোরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার শুনানির সময়। আদালতের নথি অনুসারে, নাথওয়ানি আদালতের কাছে এ ঘটনার জন্য ‘পূর্ণ দায়’ স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা যা করেছি, তার জন্য গভীরভাবে দুঃখিত এবং বিব্রত।’
বিচারক জেমস এলিয়ট এ ঘটনাকে অত্যন্ত ‘অসন্তোষজনক’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আদালতে আইনজীবীদের উপস্থাপিত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ন্যায়বিচারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ভুল তথ্য জমা দেওয়ার কারণে মামলার রায় এক দিন পিছিয়ে যায়। বিচারক আশা করেছিলেন গত বুধবারই মামলাটি নিষ্পত্তি হবে, তবে নথিতে থাকা ভুলের কারণে তা সম্ভব হয়নি। গত বৃহস্পতিবার বিচারক রায় দেন যে, মানসিক অসুস্থতার কারণে অভিযুক্ত কিশোরকে হত্যার জন্য দায়ী করা যায় না।
আদালতের নথি অনুসারে, জমা দেওয়া উপস্থাপনাগুলোতে এক রাজনীতিবিদের কাল্পনিক বক্তব্য এবং সুপ্রিম কোর্টের অস্তিত্বহীন কিছু মামলার রায় উল্লেখ করা হয়।
এসব ভুয়া তথ্য ধরে ফেলেন বিচারপতির সহকারীরা, যখন তাঁরা নথিতে উল্লেখিত মামলাগুলোর খোঁজ করতে গিয়ে সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাননি। পরে আইনজীবীরা স্বীকার করেন, সেগুলো আসলেই ‘অস্তিত্বহীন’ এবং কিছু উদ্ধৃতি ছিল ‘সম্পূর্ণ মনগড়া’।
তাঁরা আদালতকে জানান, প্রথম দিকে কিছু রেফারেন্স যাচাই করে সেগুলো সঠিক পাওয়া গিয়েছিল। সেই বিশ্বাস থেকেই বাকিগুলো যাচাই না করেই জমা দেওয়া হয়, যা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত।
এই ভুল তথ্যে প্রোসিকিউশন দলের আইনজীবী ড্যানিয়েল পোরচেদ্দুকেও পাঠানো হয়েছিল, তিনিও যাচাই করেননি।
বিচারক জানান, ২০২৪ সালের আগে থেকেই সুপ্রিম কোর্ট এআই ব্যবহারের বিষয়ে দিকনির্দেশনা জারি করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় যে, এআই ব্যবহার করে তৈরি তথ্য যাচাই না করে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’
তবে, এই ভুল তথ্য তৈরিতে ঠিক কোন জেনারেটিভ এআই ব্যবহৃত হয়েছিল, তা আদালতের নথিতে উল্লেখ করা হয়নি।
এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান দুর্ঘটনাবিষয়ক মামলায় একই ধরনের ঘটনা ঘটায় দুই আইনজীবী ও একটি আইন প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ডলার জরিমানা করেছিলেন এক ফেডারেল বিচারক।
ওই মামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে তৈরি মনগড়া মামলা। বিচারক পি. কেভিন ক্যাসেল বলেন, আইনজীবীরা খারাপ উদ্দেশ্যে কাজ করেছেন, তবে তাঁদের ক্ষমাপ্রার্থনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বেশি শাস্তি দেওয়া হয়নি।
একই বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের আইনজীবীরাও আদালতে এআইভিত্তিক ভুয়া রায় জমা দেন। পরে দোষ স্বীকার করে কোহেন বলেন, তিনি বুঝতে পারেননি গুগলের একটি টুলও এআই ‘হ্যালুসিনেশন’ তৈরি করতে পারে।
এ ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে, আদালতের মতো সংবেদনশীল স্থানে এআই ব্যবহার কতটা নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য।
তথ্যসূত্র: এবিসি নিউজ
ক্রাইম জোন ২৪