চিটাগংয়ের সঙ্গে বিসিবির সমঝোতা চুক্তি বাতিল


বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি চিটাগং কিংসের মধ্যে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন এখন চরমে। সমঝোতার সব দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। চিটাগং কিংসের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান এস. কিউ. স্পোর্টস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের কাছে বিসিবির পাওনা ৩৭ লাখ ৮২ হাজার ১৫৬ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
আজ বিকেলে বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এস. কিউ. স্পোর্টস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড বিপিএলের প্রথম (২০১২), দ্বিতীয় (২০১৩) এবং একাদশ (২০২৫) আসরে চিটাগং কিংস বিপিএলে অংশ নিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় আসরে সংস্থাটি চুক্তি অনুযায়ী আর্থিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা রক্ষা করেনি। বারবার নোটিশ ও স্মারক পাঠানোর পরও (এর মধ্যে ২০১৩ সালের ৭ মে সালিশি নোটিশ এবং ২০২৫ সালের ২২ জুলাই আইনি নোটিশ উল্লেখযোগ্য) তারা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি, কর পরিশোধ, খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমেন্টের পাওনা পরিশোধ করেনি। সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধ মেটাতে ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিসিবি ও এস. কিউ. স্পোর্টস একটি সেটেলমেন্ট চুক্তি করে। কিন্তু সংস্থাটি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি। ফলে বিসিবি ২০২৫ সালের ২২ জুলাই চুক্তি বাতিল করে ৩৭ লাখ মার্কিন ডলারের (প্রায় ৪১ কোটি টাকা) পরিশোধের দাবি জানায়। এই অর্থ উদ্ধারে বিসিবি আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
বিসিবির হিসাবে, ২০১২ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সুদ যোগ হয়ে বকেয়ার পরিমাণ বেড়েছে। মূল দাবি ছিল প্রায় ১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সুদ যোগ হয়ে সেটি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় এই অঙ্ক আরও বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে দেওয়া অর্থ, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি, কর, খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমেন্টের পাওনা এবং সুদের পরিমাণ। ২০২৫ সালের ২২ জুলাইয়ের আইনি নোটিশ অনুযায়ী, আর আগের মতো ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করে দায়মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দেয় বিসিবি বিজ্ঞপ্তিতে।
বিসিবি বলছে, বিপিএলের একাদশ আসরে খেলোয়াড়, কোচ, হোটেল ও বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীর পাওনাও পরিশোধ করেনি এস. কিউ. স্পোর্টস। এসব নিয়ে নিয়মিত অভিযোগ ও নোটিশ পাচ্ছে বিসিবি। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় প্রকৃত পাওনা আরও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, একাদশ আসরে খেলোয়াড়, কোচ, হোটেল ও সেবা প্রদানকারীর বিলও বাকি রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অভিযোগের জবাবে চিটাগং কিংসের কর্ণধার সামির কাদের চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বারবার বিসিবিকে অনুরোধ করেছি কীভাবে এত অর্থ বকেয়া হলো, তার হিসাব দেখাতে। কোনো নথি দেখাতে পারেনি তারা। সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে ২০২৪ সালে আমার যে সমঝোতা হয়েছিল, সেটি বাতিল করল কীভাবে, সেই প্রমাণও দেয়নি। হঠাৎ চুক্তি বাতিল করে বিশাল অঙ্কের দাবি তোলা বেআইনি। আমি আইনি লড়াইয়ের তাদের এই নোটিশের জবাব দেব। আমি ১৯ আগস্ট বিসিবিতে গিয়ে সব প্রমাণ হাজির করব।’
এর আগে সামির কাদের চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন, ‘ফিগারটা ৪৬ কোটি টাকার। এটা না তাদের (বিসিবি) কাছে কোনো জবাব আছে, না আমার কাছে কোনো জবাব আছে। বাজারে কিন্তু ঘুরছে ৪৬ কোটি টাকা। এই অঙ্কটা কোথা থেকে আসছে, কারও কাছে কোনো উত্তর নেই।’ তাঁর দাবি ছিল, অজান্তেই ৪৬ কোটি টাকার নোটিশ দেওয়া হয়েছে চিটাগং কিংসকে।
বিসিবি মিডিয়া ও আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিটাগাং কিংসের কাছে আমাদের পাওনা বিষয়টিতে কিছু ত্রুটি ছিল। সত্যি বলতে আমরা কিছুটা অপেশাদারভাবে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। সবশেষ টুর্নামেন্টে খেলার আগে যে চুক্তি হয়েছিল, চিটাগাং কিংস সেটি রক্ষা করতে পারেনি। আমরা সেই সমঝোতা চুক্তি বাতিল করেছি। আমরা আর সমঝোতায় যেতে চাই না। তবে বিসিবিতে ডেকে আলোচনা করার সুযোগ থাকছে, সেখানেই সিদ্ধান্তে আসা যাবে।’
ক্রাইম জোন ২৪