ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে শরীরে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন


গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে ওই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
আজ সোমবার দুপুর ১২টায় হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এন এম আল মামুন জানান, ৯ আগস্ট ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। পরে তা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তির গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তুহিনকে কতটা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা ফুটে উঠেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সময় চাপাতির কোপে তুহিনের বুকের বাঁ পাশের পাঁজর ভাগ হয়ে গেছে। ধারালো অস্ত্রের একটি আঘাত তুহিনের পিঠে লাগলে সেটি পিঠ দিয়ে ঢুকে ফুসফুস ভেদ করে সামনে বুক চিরে বেরিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তুহিনের গলার ডান পাশের সব ধমনি কেটে ফেলা হয়েছে।
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মাজহারুল হক বলেন, তুহিনের শরীরে ৯টি আঘাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গভীর হয়েছে বুকের বাঁ পাশের আঘাত। একাধিক আঘাত করে বাঁ হাতের হাড় টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একজন মানুষকে হত্যার জন্য উল্লিখিত আঘাতগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি আঘাতই যথেষ্ট ছিল। তিনি মনে করেন, আঘাতগুলো পেশাদার খুনির কাজ।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে একটি মার্কেটের ভেতর প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্কমর্তা (ওসি) শাহীন খান জানান, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর একটি মামলার বাদী হয়েছেন নিহত সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম। অপর মামলার বাদী তুহিন হত্যার আগে সংঘটিত আরও একটি হামলার ঘটনায় আহত বাদশা মিয়ার ভাই। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জাহিদুল হাসান জানান, সাংবাদিক হত্যা মামলায় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়ার পর মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে মহানগর পুলিশ ও দুজনকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন, জামালপুরের মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর এলাকার মোবারকের ছেলে মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫), তাঁর স্ত্রী গোলাপী (২৫), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. স্বাধীন (২৮), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতার হানিফের ছেলে আল আমিন (২১), কুমিল্লার হোমনা থানার আন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহজালাল (৩২), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল হাসান (২৩) ও সুমন নামের একজন।
ক্রাইম জোন ২৪