৫ মাসেও কাজ শুরু হয়নি তদন্ত কমিটির


বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) নিয়োগ-বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সম্প্রতি কারাগারে যেতে হয়েছে সাবেক উপাচার্য আব্দুস সাত্তারকে। তবে এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি গত পাঁচ মাসেও কাজ শুরু করতে পারেনি। ফলে বহাল তবিয়তে আছেন অনিয়মে জড়িত অন্যরা।
যবিপ্রবি-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম (টিওঅ্যান্ডই) ২০১৯-২০ অর্থবছরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। এরপর যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) নতুন যে প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম জমা দেয়, তা পরে সংশোধিত হয়ে ফেরত আসে এবং অনুমোদন পায়নি। আর অর্গানোগ্রাম অনুমোদন ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে নিয়োগের সুযোগ নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ চার বছরে যবিপ্রবিতে অর্গানোগ্রাম-বহির্ভূত একের পর এক নিয়োগ হয়েছে। এতে ছিল স্বজনপ্রীতি, ঘুষ লেনদেনসহ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অনিয়ম।
সূত্র অনুযায়ী, যবিপ্রবিতে ‘ল অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রেজিস্ট্রার আহসান হাবীবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও যবিপ্রবির আইনি উপদেষ্টা তজিবর রহমানের ছেলে মাহমুদ আশরাবী নিশানকে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও যোগদানপত্র অনুযায়ী তাঁকে সহকারী রেজিস্ট্রার (লিগ্যাল) পদের বিপরীতে অস্থায়ী নিয়োগ দেখানো হয়। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার আহসানের ভাতিজা, ভাগনি, মামাতো বোনসহ বেশ কিছু স্বজন ও পরিচিতজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রার আহসান অবসরে গেলেও তাঁকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বিগত সময়ের উপাচার্যদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত একটি সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন। এখন তাঁকে ঘিরে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা সেই সিন্ডিকেট সক্রিয় করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে যবিপ্রবির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য রেজিস্ট্রার আহসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগ আমলের সর্বশেষ দুই উপাচার্য নিয়োগ, আপগ্রেডেশন ও প্রমোশনে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে পছন্দমতো রিজেন্ট বোর্ড ছিল সব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার প্রধান অস্ত্র।
যবিপ্রবিতে অবৈধভাবে নিয়োগের মাধ্যমে ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট যবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য আব্দুস সাত্তার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাবেক উপ-উপাচার্য কামাল উদ্দিন ও উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়। উপপরিচালক রউফের নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় এই মামলা করা হয়। এতে ১৬ জুন সাবেক উপাচার্য সাত্তারকে কারাগারে পাঠান আদালত। কিন্তু নিয়োগ পাওয়া রউফ এখনো দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।
দুদকের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুদকের এই মামলায় আব্দুর রউফও চার্জশিটভুক্ত আসামি। আর দুদকের মামলায় চার্জশিটভুক্ত হলে সার্ভিস রুল অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের বিধান রয়েছে।’
যবিপ্রবির এসব অনিয়মের বিষয় আমলে নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সরকারকে প্রধান করে এই কমিটি গঠনের পর পাঁচ মাস পার হলেও কাজ শুরু হয়নি।
জানতে চাইলে প্রথম উপাচার্য রফিকুল জানান, সম্প্রতি তিনি তদন্ত কমিটির কাগজপত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন উল্লেখ করে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
যোগাযোগ করা হলে যবিপ্রবির উপাচার্য মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিগত সময়ের নিয়োগ-বাণিজ্য, অনিয়ম, দুদকের মামলা বা অনুমোদনহীন নিয়োগের বিষয়গুলো কমিটি দেখবে। কমিটি কাজ করছে; তবে এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
উপাচার্য জানান, দুদকের মামলার আসামি রউফের ব্যাপারে আইনগত কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর ল অফিসার নিয়োগের বিষয়টিও তদন্ত কমিটি দেখবে। রেজিস্ট্রারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার নিয়োগের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে যাতে ছেদ না পড়ে, এ জন্য রেজিস্ট্রার আহসানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য উল্লেখ করেন, তিনি কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না।