আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ ওএসডি


ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পর থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
জানা যায়, গত ৩১ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়। তবে ওএসডির বিষয়টি জানাজানি হয় ৩ আগস্ট বিকেলে।
তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একাধিক অভিযোগ ছিল।
কলেজের বর্তমান উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই অধ্যক্ষ আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারের আমলে তিনি তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যাপক সুবিধা ভোগ করেছিলেন।
অধ্যক্ষ আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়োগ। তিনি তাঁর চেয়েও জ্যেষ্ঠ ও যোগ্য শিক্ষকদের ডিঙিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষের পদ লাভ করেন। এ ছাড়া, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা এবং পিকনিকের জন্য নেওয়া টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
তা ছাড়া, শিক্ষক পরিষদ গঠনসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে তিনি নিয়ম ভঙ্গ করে নিজের অনুসারীদের প্রাধান্য দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মদদ দিয়েছেন এবং তাঁদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগও উঠেছিল।
দীর্ঘদিন ধরে এসব অভিযোগের জেরে কলেজের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁর অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বেশ কয়েকবার।
অধ্যক্ষ আমান উল্লাহর ওএসডি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে কলেজ ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাঁর বিদায়কে কলেজের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন।
উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অবশেষে কলেজ রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির কবল থেকে মুক্তি পেল।’ কলেজের শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট অধ্যক্ষ আমান উল্লাহর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। তাঁর অপসারণে নতুন করে ভালো কিছু হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ বলেন, ‘অধ্যক্ষ হিসেবে নিজের সঠিক দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। যারা বলছে, অনিয়ম করেছি তারা ব্যক্তি স্বার্থে বলছেন। সরকারি চাকরি বদলি তো হবেই, তবে যেখানেই যাই না কেন, নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করব।’