শিরোনাম
এআই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে অ্যাপল, এবার আনছে ‘অ্যানসার ইঞ্জিন’শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী হলেন জুলাই আন্দোলনে পঙ্গু হওয়া ইমরানভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের রোমাঞ্চকর শেষটা দেখবেন কোথায়৫ আগস্ট ঘিরে কোনো সমস্যা নেই, তবুও আমরা সতর্ক আছি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাহঠাৎ করেই বড় ধাক্কা খেল পাকিস্তাননাসারও আছে নিজস্ব যুদ্ধবিমানের বহর, কী কাজে ব্যবহার করেঅবশেষে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামালেন প্রধান শিক্ষিকা, শিক্ষা অফিস থেকে তদন্তআটাবের কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল, প্রশাসক নিয়োগ দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সুনামগঞ্জে বাস ভাড়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী-শ্রমিক সংঘর্ষ, অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটফ্রিজের বরফ পরিষ্কারের ৭ সহজ উপায়

ছেলের কবরের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের আকুতি মা-বাবার

ছেলের কবরের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের আকুতি মা-বাবার

ঢাকার বাড্ডায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো মাদারীপুরের শিবচরের তরুণ হৃদয় আহমেদ শিহাবের কবর আজ অনিরাপদ। প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও তাঁর কবরটি এখনো সংরক্ষিত হয়নি। কবরস্থানটির বাঁশের বেড়াও ভেঙে গেছে। জায়গার অভাবে কবরের ওপর নতুন কবর দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে হৃদয়ের কবরটি হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে—এমন আশঙ্কা থেকেই কবরটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন নিহত হৃদয়ের মা-বাবা।

গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার বাড্ডায় আন্দোলনকারীদের দিকে ছোড়া পুলিশের গুলিতে নিহত হন হৃদয়। পরদিন নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে।

শুক্রবার আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে হৃদয়ের মা নাছিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আইজ এক বছর হইয়া গেল, আমার বাবায় নাই। মোবাইলে ভিডিও দেইখা মনে হয় এই তো আইবো, মা কইয়া ডাক দিবো…কিন্তু বাবায় তো আর আসে না।’

শিবচরের সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামের শাহ আলম ও নাছিমা দম্পতির একমাত্র ছেলে ছিলেন হৃদয়। তিনি স্থানীয় একটি ফার্নিচারের কারখানায় কাজ করতেন। পড়াশোনা শেষ করে সৌদি আরবে থাকা চাচার সহায়তায় বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর।

নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিদেশ যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। করোনার সময় এইট পর্যন্ত পড়া অবস্থায় স্কুল ছাড়ে। ঢাকায় ফার্নিচারের দোকানে কাজ শিখতে যায়। ওর এক চাচা সৌদি থাকেন। কাজ শেখা শেষ হলে আর বয়স একটু বাড়লে সৌদি পাঠামু—এই স্বপ্ন ছিল সবার। টাকাও জমাইতে শুরু করি। হৃদয়ের স্বপ্ন ছিল ইতালি যাবে। বাড়ির আশপাশের অনেকেই ইতালি থাকে। কিন্তু বাবার আর বিদেশ যাওয়া হইলো না। চিরতরেই চইলা গেলো।’

তিনি বলেন, ‘কিস্তি তুইলা একটা ফ্রিজ কিনি তখন। হৃদয়রে জানাইতে ও খুবই খুশি হয়। কয়, মা কিস্তির টাকা আমি শোধ করমু। আমি কম খাইয়া টাকা জমাইয়া কিস্তি শোধ করমু। তুমি চিন্তা কইরো না। আর বিদেশ যাইতে পারলে ঘর দিমু। দাদার ঘরে আর থাকা লাগবে না!’

হৃদয়ের মা স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘বাড্ডায় আন্দোলন চলতেছিল, ছেলেরে কইছিলাম আসিস না। সে বলে, রোববার আব্বার সঙ্গে আসবো। ওই দিন বিকেলে ফোন আইলো, বাবায় গুলি খাইছে। পরে শুনি মইরা গেছে!’

নিহত হৃদয়। ছবি: সংগৃহীত
নিহত হৃদয়। ছবি: সংগৃহীত

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, গুলি হৃদয়ের বুকের এক পাশে ঢুকে অন্য পাশে দিয়ে বেরিয়ে যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে কোথাও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

হৃদয়ের বাবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে কাজ করতে অক্ষম। মা নাছিমা বেগম সেলাই কাজ করে উপার্জন করেন। আর সরকারি অনুদান হিসেবে পাওয়া পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংকে এফডিআর করে রেখেছেন। সেখান থেকে যতটুকু সুদ আসে, তা দিয়েই এখন দুজনের সংসার চলে।

হৃদয়ের মা বলেন, ‘আমার ছেলের কবরটা যদি ইট দিয়া বাঁধাই দিতো, নামটা লেইখা দিতো, তাহলে ওরে সবাই মনে রাখতো। একজনা “জুলাই শহীদ” হিসেবে।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button