শিরোনাম
গুলশানে চাঁদাবাজির মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা জানে আলম অপু রিমান্ডেমাদারীপুরে বালু তোলার ড্রেজার মেশিনে আগুন দিল উত্তেজিত জনতাকক্সবাজারে ট্রেনের ধাক্কায় একই পরিবারের ৪ জনসহ নিহত ৫ময়মনসিংহে ধর্ষণ মামলায় ২ আসামি গ্রেপ্তারবাংলাদেশি মডেল শান্তা ভারতে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন কি না খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশসম্প্রচার প্রতিষ্ঠান ভারতীয়, পাকিস্তানে এশিয়া কাপ দেখা নিয়ে শঙ্কাভ্যানের জন্য দুই বন্ধু মিলে অপর বন্ধুকে খুনহবিগঞ্জে চা-বাগানের রাস্তায় গাছ ফেলে ট্রাকে ডাকাতিমির্জাপুরে অপহরণ করে চাঁদা দাবি, স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৬মাঝ আকাশে ফ্লাইটে অসংলগ্ন আচরণে সহযাত্রীর চড়, তারপর থেকে নিখোঁজ

অস্ট্রেলিয়ার যে শহরে মানুষ থাকে মাটির নিচে

অস্ট্রেলিয়ার যে শহরে মানুষ থাকে মাটির নিচে

শহরটির বয়স প্রায় ১১০ বছর। ‘ম্যাড ম্যাক্স বিয়ন্ড থান্ডারডোম’, ‘প্রিসিলা’, ‘ডেজার্ট কুইন’ ও ‘রেড প্ল্যানেট’ চলচ্চিত্র যাঁরা দেখেছেন, বিস্তারিত না জানলেও তাঁরা এ শহর ও তার পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত। কারণ এই চলচ্চিত্রগুলো শতবর্ষী শহরটিতেই চিত্রায়িত হয়েছিল।

১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রটি চিত্রায়িত হয়েছিল কুবার পেডি শহরে। ছবি: উইকিপিডিয়া
১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রটি চিত্রায়িত হয়েছিল কুবার পেডি শহরে। ছবি: উইকিপিডিয়া

১৯১৫ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে, অ্যাডিলেড শহর থেকে প্রায় ৮৫৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের এই অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয় দামি রত্ন ওপালের খনি। সেসব খনি থেকে ওপাল তুলে ব্যবসা করতে আসা ইউরোপীয় সাদা মানুষেরা ধীরে ধীরে এই খনি এলাকাতেই গড়ে তোলে শহর। কিন্তু প্রথাগত ভাবে মাটির ওপরে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে পারেনি তারা। ভাবতে হয়েছিল বিকল্প।

কারণ মরুময় সে অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া ভয়ংকর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সে সময় সেখানকার তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আর শীতকালে রাতের তাপমাত্রা নেমে যায় প্রায় হিমাঙ্কের কাছাকাছি। কিন্তু মাটির নিচে তাপমাত্রা থাকে সহনীয়। সেখানে গড় তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরম ও শীতে মাটির নিচে প্রায় একই রকম তাপমাত্রা থাকে বলে সেটা আরামদায়ক।

কুবার পেডি শহর। ছবি: উইকিপিডিয়া
কুবার পেডি শহর। ছবি: উইকিপিডিয়া

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চলে খনি থেকে রত্নপাথর তুলে অর্থ উপার্জনে আসা ইউরোপীয় সাদা মানুষেরা ওপাল পাওয়ার জন্য ডগিং করত। অর্থাৎ খনন করত। প্রচণ্ড গরম আর ধুলোঝড় থেকে বাঁচতে তারা সেই খনিগুলোতেই বসবাস করত। স্থানীয় কোকাথা বা আরবানা গোষ্ঠীর আদিবাসীরা সাদা মানুষদের এই খোঁড়াখুঁড়ি দেখে এলাকাটির নাম দেয় কুপা পিটি বা কুবেরা পিটি। এর অর্থ সাদা মানুষের গর্ত বা গর্তে বসবাসকারী মানুষ। অবশ্য অনেকে মনে করেন, নামটি এসেছিল আদিবাসী কুবি-পেডি শব্দ থেকে। এর ইংরেজি অর্থ গুড ওয়াটার হোল। বাংলায় বলা যেতে পারে, শুষ্ক এলাকায় খুঁজে পাওয়া পানির উৎস। আদিবাসীরা এই মরুময় শুষ্ক এলাকায় পানির উৎস খুঁজে পেয়েছিল।

কুবার পেডির উমুনা ওপাল মাইনের প্রবেশপথ। ছবি: উইকিপিডিয়া
কুবার পেডির উমুনা ওপাল মাইনের প্রবেশপথ। ছবি: উইকিপিডিয়া

সে যা হোক, ১৯২০ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই শহরের নাম কুবার পেডি হিসেবে নথিভুক্ত করে।

পুরো শহরটিই মাটির নিচে

যেখানে দামি রত্ন ওপাল পাওয়া যায় সেখানে গয়নার দোকান না থাকলে চলে? কুবার পেডির একটি গয়নার দোকান। ছবি: উইকিপিডিয়া
যেখানে দামি রত্ন ওপাল পাওয়া যায় সেখানে গয়নার দোকান না থাকলে চলে? কুবার পেডির একটি গয়নার দোকান। ছবি: উইকিপিডিয়া

তারপর সেই শহরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে গির্জা, দোকানপাট, বার, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি— সবই মাটির নিচে। বৈরী প্রকৃতি থেকে বাঁচার কোনো পথ ছিল না বলে। মাটির নিচের এই ঘরগুলোকে বলা হয় ডাগআউট। কিছু কিছু ডাগআউট আবার বিলাসবহুল। সেখানে আছে সুইমিং পুল, গেম রুম, আলিশান বাথরুম! ২০২৩ সালের গণনা অনুসারে এসব ডাগআউটে এখন স্থায়ী ভাবে বসবাস প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন মানুষ। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, নতুন ঘর তৈরি করতে গিয়ে যে খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়, তাতে মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় দামি ওপাল পাথর। সেগুলোর বাজারমূল্য কয়েক লাখ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

খরচ কম, আরাম বেশি

একটি মোটেল রুম। কুবার পেডিতে মাটির নিচে বসবাস করা আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। ছবি: উইকিপিডিয়া
একটি মোটেল রুম। কুবার পেডিতে মাটির নিচে বসবাস করা আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। ছবি: উইকিপিডিয়া

কুবার পেডির বাসিন্দারা সৌর ও বায়ুশক্তি নির্ভর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। যদি কেউ মাটির ওপর বসবাস করতে চায়, তাদের প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যয় করতে হয় প্রচুর অর্থ। অন্যদিকে, মাটির নিচে বসবাসে সেসব খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। তা ছাড়া শহরটিতে বাড়ির দামও তুলনামূলকভাবে কম। তিন কক্ষের শোওয়ার ঘরসহ মাটির নিচের বাড়ি পাওয়া যায় মাত্র ৪০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারে। যেখানে অ্যাডিলেড শহরে একই আকারের বাড়ির দাম প্রায় ৭ লাখ ডলার।

পর্যটন আকর্ষণ

বলে রাখা ভালো, এই কুবার পেডি থেকে বিশ্বের ৯০ শতাংশ  মূল্যবান ওপাল উত্তোলন করা হয়। পর্যটকেরা এখানে  খনি সফর  করতে পারে এবং নিজেরা পাথর খুঁজতে পারেন। পর্যটকদের ওপাল খোঁজার এই প্রক্রিয়ার নাম নুডলিং। এখানে ওপাল খনির ইতিহাস জানানোর জন্য আছে ওল্ড টাইম মাইন ও মিউজিয়াম। আছে ফেয়ামুস গ্রাসহাউস চার্চ নামে ভূগর্ভস্থ গির্জা আর ডেজার্ট ক্যাথেড্রাল। মুন প্লেইন নামে দেখতে চাঁদের পৃষ্ঠের মতো একটি ল্যান্ডস্কেপ আছে।

ভূগর্ভস্থ গির্জা। ছবি: উইকিপিডিয়া
ভূগর্ভস্থ গির্জা। ছবি: উইকিপিডিয়া

তবে যাঁরা গলফ বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন, এখানে আছে তাঁদের জন্য দারুণ এক গলফ কোর্স। নাম তার কুবার পেডি গলফ ক্লাব। সম্ভবত এটি পৃথিবীর একমাত্র ধূলিঝড় প্রবণ মরুভূমির কোর্স, যেখানে সবুজ ঘাসের বদলে আছে  বালি ও ধূসর মাটি।

পৃথিবীর অন্য প্রান্তেও এমন শহর

তুরস্কের মধ্য আনাতোলিয়ার কাপাদোশিয়ায় অবস্থিত ডেরিংকুয়ো ভূগর্ভস্থ শহরের একটি রাস্তা। মাটির প্রায় ২৮০ ফুট গভীরে অবস্থিত এটি। ছবি: উইকিপিডিয়া
তুরস্কের মধ্য আনাতোলিয়ার কাপাদোশিয়ায় অবস্থিত ডেরিংকুয়ো ভূগর্ভস্থ শহরের একটি রাস্তা। মাটির প্রায় ২৮০ ফুট গভীরে অবস্থিত এটি। ছবি: উইকিপিডিয়া

কুবার পেডি প্রথম বা একমাত্র আন্ডারগ্রাউন্ড শহর নয়। প্রাচীন তুরস্কের কাপাদোকিয়া অঞ্চলেও রয়েছে ডেরিনকুয়ু নামে এক বিস্ময়কর ভূগর্ভস্থ শহর। সেখানে এক সময় ২০ হাজার মানুষ একসঙ্গে বসবাস করত। সে ভূগর্ভস্থ শহরে বাতাস চলাচলের জন্য রয়েছে পাইপ, পানির কূপ, গির্জা, গুদামঘর। তবে মাটির নিচে বসবাসের বড় বাধা হলো আর্দ্রতা। বৃষ্টি বেশি হলে কিংবা জায়গাটি পানির স্তরের কাছাকাছি হলে দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে ভাব হয়। এ থেকে দেখা দিতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ কারণে মাটির নিচের শহরগুলো সাধারণত শুষ্ক, উষ্ণ এলাকায় গড়ে ওঠে।

ভবিষ্যতের বাসস্থান

বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আমেরিকা, ইউরোপ, চীনসহ অনেক দেশেই অসহনীয় গরম দেখা যাচ্ছে। চীনের চোংকিং শহরে সম্প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি বাংকারগুলো খুলে দেওয়া হয় দাবদাহ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে। এই বাস্তবতায় কুবার পেডি যেন ভবিষ্যৎ শহরের এক দারুণ উদাহরণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে আমাদের ভবিষ্যতের জীবনযাপন হয়তো মাটির নিচেই চলে যাবে। কুবার পেডি তারই ইঙ্গিত?



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button