শিক্ষক নিয়োগে ৪৯তম বিশেষ বিসিএস: প্রস্তুতির কিছু কৌশল


৪৯তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এই বিসিএসে ৬৮৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনলাইন আবেদন এবং ফি জমা শুরু হয়েছে গত ২২ জুলাই থেকে। শেষ হবে আগামী ২২ আগস্ট (সন্ধ্যা ৬ টায়)। পিএসসি জানিয়েছে, আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ টাইপ) অনুষ্ঠিত হতে পারে। সময় হাতে কম, তাই এ স্বল্প সময়ে যেসব বিষয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনায় প্রস্তুতি নেওয়া যায়, সেসব নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক মো. হুমায়ুন আহমেদ।
সিলেবাস, নম্বর-বণ্টন ও পরীক্ষার ভাষা
পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন, যোগ্যতা, পরীক্ষার ধরন ইত্যাদি সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ডাউনলোড করে দেখে নিতে হবে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সরকারি সাধারণ কলেজগুলোর জন্য ২৭টি বিষয়ে ৬৫৩ জন এবং সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের জন্য ৯টি বিষয়ে ৩০ জনসহ সর্বমোট ৬৮৩টি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
লিখিত পরীক্ষায় (এমসিকিউ টাইপ) সাধারণ বিষয়গুলো (বাংলা ২০, ইংরেজি ২০, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ২০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০, গণিত ১০, মানসিক দক্ষতা ১০) থেকে ১০০ নম্বর ও বিষয়ভিত্তিক ১০০ নম্বর মিলিয়ে মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। উত্তীর্ণদের ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা হবে। (এমসিকিউ টাইপ) লিখিত বলতে এমসিকিউ পরীক্ষা বোঝানো হয়েছে।
পিএসসির ওয়েবসাইট থেকে বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস প্রিন্ট করে নিন ও কয়েকবার পড়ুন। জেনারেল বিষয়ের প্রশ্ন অন্যান্য পরীক্ষার মতোই হবে। পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নগুলো বাংলা না ইংরেজিতে হবে, বিজ্ঞপ্তিতে এমন কোনো নির্দেশনা নেই। ধরে নেওয়া যায় বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষাও বাংলাতেই হবে।
সাধারণ বিষয়গুলো নিয়ে বলার কিছু নেই। এ ব্যাপারে সবারই কমবেশি ধারণা রয়েছে। অতীতে এমন বিশেষ বিসিএস খুব বেশি হয়নি। তাই বিষয়ভিত্তিক ১০০ নম্বরের (এমসিকিউ টাইপ) লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য (কিছু বিষয় বাদে) বাজারে আপাতত তেমন কোনো বই নেই (অল্প কিছুদিনে কিছু বই আসবে)। নিজে কৌশলী হয়ে প্রয়োজনীয় ম্যাটারিয়াল জোগাড় করে পড়তে পারলে কম সময়েও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন সম্ভব হবে।
পদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে (সব বিষয়) প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
১. সিলেবাস ধরে নিজ বিষয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) বই থেকে এমসিকিউ প্রশ্নগুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
২. নিজ বিষয়ের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সব প্রশ্ন বুঝে বুঝে সমাধান করতে হবে।
৩. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে।
৪. নিজ বিষয়ের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করতে হবে।
৫. নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন বই ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
৬. প্রকাশিত সিলেবাস অনুসারে অনার্সে পঠিত মৌলিক বইগুলোর প্রতিটি অধ্যায় পড়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের নোট নিতে হবে। অনার্সে যারা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়েছে তাদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভার্সনের সংশ্লিষ্ট বই যথেষ্ট সহায়ক হবে।
৭. সময় বাঁচাতে কোন টপিক কোন বইয়ের কোন পৃষ্ঠা থেকে পড়েছেন সেটি সিলেবাসের টপিকের পাশে লিখে রাখুন। তাহলে কম সময়ে টপিক খুঁজে পেতে সুবিধা হবে। প্রতিটি বিষয় পড়ার পর সংক্ষিপ্ত নোট রাখতে হবে যেন পরীক্ষার আগে কম সময়ে রিভিশন দেওয়া যায়।
সাধারণ সতর্কতা
১. পরীক্ষা যেহেতু অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে, সেহেতু এত কম সময়ে কোচিংয়ে (অনলাইন/অফলাইন) পেছনে না দৌড়ে নিজে নিজে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। এতে অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হবে। তুলনামূলক বেশি পড়া যাবে।
২. সাধারণ ১০০ নম্বর যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বিষয়ভিত্তিক ১০০ নম্বরও গুরুত্বপূর্ণ। একটাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অন্যটাকে গুরুত্বহীন করে ফেলা যাবে না।
৩. সাম্প্রতিক তথ্য নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। সাম্প্রতিকের জন্য চাকরির প্রস্তুতিমূলক ফেসবুক গ্রুপগুলোতে শেয়ারকৃত তথ্যের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে সেগুলা দেখলেই হবে।
৪. ঢালাওভাবে সবকিছু না পড়ে কম গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বাদ দিয়ে পড়তে হবে। যে বিষয়ের তথ্য পরিবর্তন হবে না (যেমন-বাংলা, ইংরেজি, গণিত ইত্যাদি) সেগুলো বেশি সময় দিয়ে পড়া ভালো।
৫. নানা জনের নানা পরামর্শ না নিয়ে যেকোনো একজনের কথা শুনুন ও পালনের চেষ্টা করুন।
৬. পরীক্ষা দিলে পাস করব কি করব না এই দ্বিধায় না থেকে দিন ভাগ করে পড়াশোনা করা।
৭. ‘আসুন মেসেঞ্জার গ্রুপে পড়ি’, ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পড়ি’—এসব না করে নিজের মতো করে পড়া।
৮. তথ্যের বিশুদ্ধতা যাচাই পূর্বক অনলাইন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তা নিতে হবে।
সিভিল সার্ভিসে যোগদানের এমন সুবর্ণ সুযোগ বারবার আসে না। অভিযোগ, অনুযোগ, অজুহাত বাদ দিয়ে সময় নষ্ট না করে সময়টাকে কাজে লাগান। চেষ্টা করুন। সময় কম হলেও আপনার পরিশ্রম প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে সহায়ক হবে।
শুভকামনা রইল।