শিরোনাম

ফেসবুক লাইভে কেঁদে উমামা বললেন, জুলাই কেন ‘মানি-মেকিং মেশিন’ হবে

ফেসবুক লাইভে কেঁদে উমামা বললেন, জুলাই কেন ‘মানি-মেকিং মেশিন’ হবে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা প্রশ্ন রেখে বলেছেন, জুলাই কেন ‘মানি-মেকিং মেশিন’ হবে? তিনি বলেছেন, ‘আনফরচুনেটলি সেটা হয়েছে।’ গতকাল রোববার দিবাগতরাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, অন্যের ক্ষতি করার ইচ্ছা তাঁর নেই, অন্যকে অসম্মান বা কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছাও নেই।

প্রায় দুই ঘণ্টা ২৪ মিনিটের ভিডিওতে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। উমামা বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই গিয়েছি। ছাত্র ফেডারেশন করার সময় অনেকবার দেখেছি। ৩০-৪০ জনের মিছিলের সময় বলতাম, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক।’ কিন্তু কখনো ভাবিনি, এই স্লোগান দিতে দিতে শিশুসহ সবাই রাস্তায় নেমে জীবন দেবে। জুলাই-আগস্টে সাধারণ মানুষকে ফাইট নিয়ে করেছি। এ কারণে এক বছর ধরে টিকে ছিলাম। কারণ আমরা একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর আর পারছিলাম না। দেশকে আরও বড় কিছু দেওয়ার চিন্তা থেকে ফেডারেশন থেকে সরে গিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করি। তখন আমি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমাকে ডাকত না। কারণ হতে পারে, আমি প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করে দিতে বলেছিলাম।

জুলাই আন্দোলনে সমন্বয়কদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫২, ৬২ বা ১৫৮ জন সমন্বয়ক যে হয়েছে, সেগুলো সেভাবে ফাংশন করছিল না। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিচ্ছিল। তবে সমন্বয়ক টার্মটা সে সময় দরকার ছিল, যাতে সবাইকে কানেক্ট করা যায় না। আমার কাছে মনে হয়েছে, সমন্বয়কদের চেয়ে অন্যদের সহযোগিতা বেশি পেয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পরে অনেক র‍্যালি করেছি, গণভবনে গেছি। এরপর অনেক কাহিনি চলেছে। পরদিন দেখি, সমন্বয়ক পরিচয়ে একেকজন একেক জায়গায় দখল করেছে। সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও দখল করছে। আওয়ামী লীগের রক্ষী বাহিনী জায়গায়, জায়গায় গিয়ে দখল করে। আমার মনে হচ্ছে যে, এখন কি রক্ষী বাহিনীর মতো সমন্বয়ক বাহিনী তৈরি হচ্ছে নাকি। আস্তে আস্তে সব জায়গায় দখল করে ফেলবে।

আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সমন্বয়কদের অনেকের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে উমামা বলেন, সমন্বয়ক বাহিনী হয়তো সেভাবে অস্ত্র দিয়ে হয়নি। কিন্তু তখন সবার সঙ্গে আলাপ করে আমার মনে হয়েছে, এখন আসলে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের আসলে দরকার কি? এটা তো শুধু ছাত্রদের। এখন দরকার, সবাইকে একোমোডেট করা যায়, সেটা ভাবা উচিত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তাদের আর কিই বা করার আছে। এটা আরও বেশি ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যাওয়ার কারণে অনেকগুলো ডিমেরিট আমরা ভোগ করছি—মন্তব্য করে উমামা বলেন, ওইগুলো বলার কারণেই আমি প্রচুর শত্রু বানায়ে ফেলছি। এত মানুষ আমাকে খারাপ ভাবা শুরু করে যে, আমি রীতিমতো তবদা খেয়ে যাই। পরে জেলায় জেলায় গিয়ে দেখেছি, অনেক ভালো ভালো ছেলে কিছু করতে চায়। ওরা দেশটাকে পুনর্গঠন করবে।

উমামা আরও বলেন, জুলাই অনেক বড় অভিজ্ঞতা। মানুষ অবিশ্বাস্য লড়াই করেছে। আমার মাথায় আসেইনি যে, এটা দিয়ে টাকা-পয়সা ইনকাম করা যায়! আমি মুখপাত্র হওয়ার পর আবিষ্কার করছি, এটা দিয়ে অনেকে অনেক কিছু করছে। টেন্ডার-তদবির বাণিজ্য করছে, ডিসি নিয়োগ করছে। এগুলো অহরহ করেছে। এর আগে এটা নিয়ে ধারণা ছিল না। জুলাই আন্দোলনকে কেন মানি মেকিং মেশিন করব। আনফরচুনেটলি সেটা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক এই নেত্রী আরও বলেন, অনেকে বলেন যে, আমি কত হাজার কোটি টাকা কামাইছি? তাদের আমি বলতে পারি, আমার একটি ভালো জীবন আছে। ভালো পরিবারের সদস্য। এত খারাপ অবস্থা আসে নাই। আমার স্কলারশিপের জন্যও প্রয়োজন নাই। আমার পরিবারের সাপোর্ট আছে। তারা চায়, আমি দেশের জন্য কিছু করি।

আজকের পত্রিকার পাঠকদের সুবিধার্থে উমামা ফাতেমার লাইভের ভিডিওটি এখানে সংযুক্ত করে দেওয়া হলো—



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button