[ad_1]
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলস্বরূপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা। রোববার আমিরাত-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশক আগেও এই বিষয়টি বড় কোনো আলোচনার কেন্দ্রে ছিল না, অথচ আজ তা ভয়াবহ বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
ন্যাশনাল-এর প্রতিবেদনে ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলের আল খোবার গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম হাদি শাম ডাউসের কথা বলা হয়েছে। তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে খড়ের ঘরে বাস করতেন। ২০২৩ সালের মার্চে একটি প্রবল ঝড় সেই ঘর ভেঙে দেয়। এর পরের মাসেই আবার সাগরের পানি ঢুকে পড়ে গ্রামটিতে। বাধ্য হয়ে ইব্রাহিম তাঁর স্ত্রী, তিন কন্যা ও পাঁচ পুত্রকে নিয়ে হোদেইদা শহরে পালিয়ে যান। আশপাশের আরও অনেকেই গ্রাম ছেড়ে ভেতরের দিকে সরে যান এই আশায় যে, একদিন জোয়ার থেমে যাবে।
এ ধরনের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ায় বাড়ছেই। গত ফেব্রুয়ারিতে ‘ইউএই ইনডিপেনডেন্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাক্সেলারেটর’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়—এই শতকে জলবায়ু-সংক্রান্ত দুর্যোগে প্রতি বছর গড়ে ৭০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন, প্রাণ যাচ্ছে অন্তত ২৬০০ জনের, আর ক্ষতির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ কার্ল অ্যাডলারের মতে, ‘এ অঞ্চলে জলবায়ু অভিবাসনের বিষয়টি এত দিন প্রায় অদৃশ্য ছিল। অথচ এটা গত দুই দশক ধরেই চলছে এবং আগামী দিনে আরও ভয়াবহ হবে।’
‘অদৃশ্য’ শরণার্থী সংকট
আন্তর্জাতিকভাবে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’ শব্দটির কোনো স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। ফলে যারা শুধু জলবায়ুর অভিঘাতে বাস্তুচ্যুত হন, তাঁরা পড়েন আইনি সুরক্ষা ও সহায়তার বাইরের পরিসরে। জাতিসংঘের শরণার্থী কমিশনের জলবায়ু বিশেষ উপদেষ্টা অ্যান্ড্রু হার্পার বলেন, ‘এরা নিজেদের দেশেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় খুঁজে বেড়ায়, অথচ শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পায় না।’
দ্বিমুখী সংকটে ইয়েমেন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। একদিকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ, অন্যদিকে জলবায়ু দুর্যোগ দেশটির নড়বড়ে অবকাঠামো সহ সবকিছুকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আকস্মিক বন্যায়। ইয়েমেনের ধামার অঞ্চলের বাসিন্দা আহমেদ মাহদি আবদুল্লাহর কথাই ধরা যাক। তিনি নিজের চার ছেলে, দুই মেয়ে, তিন পুত্রবধূ এবং পাঁচ নাতি-নাতনিকে হারিয়েছেন এই বন্যায়।
এ ছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের একটি বড় অংশ এখন শহরে আশ্রয় নিচ্ছে। তবে নতুন শহরে তাঁদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বৈষম্য ও উপেক্ষার। সেখানকার স্থানীয়রাও অতিরিক্ত চাপ সামলাতে পারছেন না।
ভবিষ্যৎ আরও ভয়ংকর
জলবায়ু মডেল অনুযায়ী—এই অঞ্চলজুড়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি দাবদাহ, খরা ও বন্যা দেখা দেবে। কিছু শহর ২০৫০ সালের মধ্যেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো আঞ্চলিক নীতিমালা নেই জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সুরক্ষায়।
কার্ল অ্যাডলার ও অ্যান্ড্রু হার্পার দুজনই মনে করেন—পরিবেশ উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতি দেওয়া না হলে, নীতিগত সহায়তা মিলবে না।
অর্থ সংকট ও অবহেলা
জলবায়ু আলোচনায় আজও উদ্বাস্তু সমস্যা প্রায় অনুপস্থিত। এদিকে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ২০২৪ সালে ঘোষণা দিয়েছে, তারা বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে কার্যক্রম সংকুচিত করতে বাধ্য হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তারা ৩ হাজার ৫০০ জন স্টাফ ছাঁটাই ও বহু কার্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে হার্পার বলেন, ‘আমরা এক সত্যিকার ঝড়ের মুখোমুখি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, উষ্ণতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর প্রতিরোধহীনতা আমাদের ওপর একসঙ্গে আঘাত করছে।’
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তনযোগ্য। তবে তা সম্ভব হবে শুধু তখনই, যখন বাস্তুচ্যুত মানুষের কথা জলবায়ু নীতির কেন্দ্রে থাকবে। উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতি, সহায়তা ও অন্তর্ভুক্তি ছাড়া জলবায়ু ন্যায়বিচার অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]