[ad_1]
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বামপন্থী দলগুলো বিদ্যমান জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে কমিশনের প্রস্তাবিত ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করার পক্ষে। বিদ্যমান মূলনীতি বাদ দিলে সংলাপের আলোচনা বয়কটের কথা বলে সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ। বিএনপি-জামায়াত কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রাখার কথা বলে। এনসিপি কমিশনের প্রস্তাবে একমত।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরেন। এই নিয়ে কমিশনের বৈঠকে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতিতে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়া সম্ভব না। কারণ এখানে বিভিন্ন আদর্শের মানুষ আছে। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ; রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে যাবে, তারা সিদ্ধান্ত দেবে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এই সংবিধানে অনেক অসম্পূর্ণতা আছে। সেজন্য আমরা আলোচনা করছি, যাতে সম্পূর্ণ করা যায়। কিন্তু মূলনীতির প্রশ্নে ছাড় দেওয়া সম্ভব না।’
বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি প্রসঙ্গে এইভাবে লেখা যেতে পারে। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় পরিচালনার চার মূলনীতির সঙ্গে (৭২ সংবিধান অনুযায়ী- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা) সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার মূলনীতি আছে, শব্দের মারপ্যাঁচে সেটা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত জাতির সামনে প্রকাশ করা হয়, সেটার সঙ্গে আমরা একেবারেই নাই। এরকম অবস্থা যদি চলতে থাকে আমাদের পক্ষে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা নিয়মিত করা সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে যে ঐকমত্য গঠনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে একমত হচ্ছি, সেটাও বাধাগ্রস্ত হবে।’
এসময় কমিশনের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশার কথা জানান সিপিবির এই নেতা।
কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতির প্রসঙ্গে আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কমিশনের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। বরং এটাই আমাদের প্রস্তাব।’
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সংলাপে জোরালো বক্তব্য দিতে পারছি না। এটা নিয়ে আমাদের কর্মীসমর্থকদের কাছ থেকে প্রশ্ন শুনতে হয়। তাদের কথা বামপন্থীরা শক্ত করে বলে, কিন্তু আমরা নীরব থাকি। আমরা শক্ত করে বললে এখানে বিষম ব্যাপার। তাই ওনাদেরও সংযত হওয়া দরকার। নির্বাচন হলে ওনাদের বক্তব্য টিকবে না। তাই জোরালো বক্তব্য দিচ্ছি না।’
একই প্রসঙ্গে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দলীয় অবস্থান হচ্ছে পূর্বের (মূলনীতি) সবকিছু বাতিল করা। কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা আছি। আমরা পূর্বেকার তর্কে যেতে চাই না।’
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা–সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে, বিশেষ করে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে।’
তিনি বলেন, ‘সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মতো বিতর্কিত ধারণার পরিবর্তে কমিশন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন, যা বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্ন পূরণ করবে।’
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমরা গত ৪ দিন ধরে আলোচনা করছি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মনে করে, ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। কারণ সমাজতন্ত্র আন্তর্জাতিকভাবে একটা পরিত্যক্ত বিষয় হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ৪ দিনের আলোচনার পর কমিশন আজ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার প্রতি আমরা সমর্থন দিয়েছি। যদিও আমাদের অনেকের মনের মধ্য ভিন্নমত আছে। সেটা হলো আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস– এই শব্দটা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারপর কমিশনের প্রস্তাবে যেহেতু ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি কথা আছে, তাই আমরা ভিন্নমত থেকে সরে এসেছি। তবে ভবিষ্যতে কোনও রাজনৈতিক দল যদি সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে এবং সেটা পাশ হয়, হয়তো তখন আমরা তার বিরোধিতা করব না।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]