রামগড়ের ‘রুম পার্টি’ টর্চার সেলের হোতা সাবেক মেয়র কাজী রিপন গ্রেপ্তার


খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান কাজী রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রামগড়ে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কাজী রিপনের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, দুর্নীতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন বলেন, সাবেক মেয়র কাজী রিপনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। একটি মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।
রামগড় থানার পরিদর্শক নুর উদ্দীন বলেন, কাজী রিপনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি এবং পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর প্রথম স্ত্রীর করা একটি মামলায় এক বছরের সাজাও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যায় কাজী শাহজাহান রিপনের পৌরসভার সোনাইপুলের বাসা ঘিরে ফেলে পুলিশ। এ সময় তিনি পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে একপর্যায়ে ধাওয়া দিয়ে তাঁকে ধরে ফেলে পুলিশ।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কাজী রিপনের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মী, বিরোধীদলীয় কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পারিবারিক বিরোধের জেরে নিজের ছোট ভাইকে গুলি করে তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। অভিযোগ আছে, মেয়র থাকাকালে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী টিটন দাশকে বিলে স্বাক্ষর না করায় নিজ দপ্তরেই মারধর করেন কাজী রিপন ও তাঁর অনুগত পেটোয়াবাহিনী।
সরকারি জমি নিয়ে জালিয়াতি
রামগড় স্থলবন্দরের জন্য সড়ক প্রশস্তকরণের অধিগৃহীত ভূমি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে কাজী রিপনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি জাল কাগজপত্র দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন।
রামগড়ের গোপন টর্চার সেল রুম পার্টি
রামগড়ে কাজী রিপনের টর্চার সেল ‘রুম পার্টি’ একটি আতঙ্কের নাম ছিল। পৌর শহরের উপকণ্ঠে একটি পুরোনো কাজীর সমিলের ভেতরে এই নির্যাতনকক্ষের অবস্থান ছিল। দলীয় কর্মী, বিরোধী দলের কেউ অথবা কোনো ব্যবসায়ী তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে তাঁকেই নিয়ে যাওয়া হতো ‘রুম পার্টি’তে। শোনা যায়, সেখানে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলত। এই ‘রুম পার্টি’র অস্তিত্বের কথা নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মী। তবে কাজী রিপনের বাহিনীর ভয়ে তাঁরা কেউ নাম প্রকাশে রাজি হননি।