[ad_1]
প্রায় সাড়ে ৮ লাখ বছর আগে একটি ছোট শিশুকে কেটে হত্যা ও ভক্ষণ করা হয়েছিল। স্পেনের উত্তরে আতাপুয়েরকা অঞ্চলের গ্রান দোলিনা গুহায় পাওয়া শিশুর একটি গলার হাড়ে কাটা দাগের বিশ্লেষণ করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত শিশুটির বয়স ছিল আনুমানিক ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যে। হাড়ের কাটা দাগ এতটাই নিখুঁত যে, এটি ইঙ্গিত দেয় শিশুটিকে অন্য শিকার প্রাণীর মতোই প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়া হয়েছিল।
গ্রান দোলিনা খননের সহপরিচালক প্রত্নতত্ত্ববিদ পালমিরা সালাদিয়ে বলেন, ‘শিশুর বয়স এবং হাড়ে কাটা দাগের নিখুঁততা একে বিশেষ করে তোলে। এটি সরাসরি প্রমাণ দেয় যে, শিশুটিকে অন্য শিকারের মতোই প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছিল।’
এই মাসে গবেষক দল সেখানে খনন করে ১০টি কঙ্কালের একটি সেট পান, যেগুলোর অনেকগুলোতেই মাংস ছাড়ানোর দাগ ও হাড় ভাঙার চিহ্ন দেখা গেছে—যেমনটা সাধারণত শিকার করা প্রাণীর হাড়ে দেখা যায়।
উদ্ধারকৃত সব কঙ্কালই ছিল ‘হোমো আন্টেসেসর’ নামের এক প্রাচীন মানব প্রজাতির। এই প্রজাতি আনুমানিক ৭ লাখ ৭০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ‘হোমো আন্টেসেসর’ কেবল স্পেনের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আতাপুয়েরকাতেই পাওয়া গেছে, ফলে এটি মানব বিবর্তনের বৃক্ষে কোথায় অবস্থান করে তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। ১৯৯৭ সালে আবিষ্কারের পর থেকেই বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতিকে নিয়েই বিতর্কে রয়েছেন—কেউ কেউ বলেন এটি মানব ও নিয়ান্ডারথালের পূর্বপুরুষ, কেউ বলেন এটি মানবগোষ্ঠীর একটি আলাদা শাখা।
গ্রান দোলিনা গুহা গত তিন দশকের খননে অন্তত দুই ডজন মানুষের ক্যানিবালিজমের (মানুষ খাওয়ার) প্রমাণ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া মানুষের হাড়ের প্রায় ৩০ শতাংশেই কাটা দাগ রয়েছে, যা ইঙ্গিত করে এসব প্রাচীন মানুষ একে অপরকে খাদ্য হিসেবে খেত।
সালাদিয়ে বলেন, ‘এখানে জীবাশ্ম হাড়ের সংরক্ষণ অত্যন্ত চমৎকার। কাটা দাগগুলো আলাদা নয়—মানবদেহে কামড়ের চিহ্নও পাওয়া গেছে, যা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ যে এই দেহগুলো খাওয়া হয়েছিল।’
গবেষকেরা বলছেন, নব্য আবিষ্কৃত এসব কঙ্কাল ইঙ্গিত দেয়—প্রাচীন মানুষেরা কেবল খাদ্যের জন্যই নয়, অঞ্চল দখলের কৌশল হিসেবেও সঙ্গীদের খেত।
সালাদিয়ে বলেন, ‘আমরা এখন যা প্রমাণ করছি, তা হলো—এই ক্যানিবালিজমের আচরণটি নিয়মিত ছিল। মৃতদের প্রতি আচরণ ব্যতিক্রম নয়, বরং তা বারবার ঘটেছে।’
ডিক্যাপিটেড (অর্থাৎ মাথা কাটা) ও ভক্ষণ করা শিশুদের মোট ১০টি মানব কঙ্কাল যেই গ্রান দোলিনা গুহার একটি জিওলজিক্যাল স্তর বা মাটির স্তর থেকে পাওয়া গেছে, তার সময়কাল ৮ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৭ লাখ ৮০ হাজার বছরের মধ্যে। এই সময়ে ইউরোপে মানব স্বজনের সবচেয়ে প্রাচীন উপস্থিতির প্রমাণ তো বটেই, এটাই এখন পর্যন্ত মানুষের ক্যানিবালিজমের সবচেয়ে পুরোনো নিশ্চিত প্রমাণ।
এর আগে কেনিয়ায় ১ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন বছর পুরোনো হাড়ে কাটা দাগ পাওয়া গেলেও তা ক্যানিবালিজমের প্রমাণ কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
গ্রান দোলিনা গুহাটি এখনো পুরোপুরি খনন করা হয়নি। গবেষকেরা বলছেন, এখানে আরও এমন মানব জীবাশ্ম লুকিয়ে থাকতে পারে, যা ‘হোমো আন্টেসেসর’-এর জীবন, মৃত্যু ও মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নতুন তথ্য দিতে পারে।
সালাদিয়ে বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা এমন নতুন প্রমাণ পাচ্ছি, যা আমাদের বাধ্য করছে ভাবতে—তারা কেমন ছিল, কীভাবে মারা যেত, আর মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে কী করা হতো।’
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]