[ad_1]
ভেনিস উপহ্রদের দক্ষিণে অবস্থিত পরিত্যক্ত দ্বীপ পোভেলিয়া। এর নাম শুনলেই অনেকের মনে আসে প্লেগ আক্রান্তদের গণকবর, মানসিক রোগীদের জন্য নির্মিত পুরোনো আশ্রম এবং ভুতুড়ে ইতিহাসের কথা। সেই দ্বীপ এবার নতুন পরিচয়ে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে এটি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যই উন্মুক্ত এক শহুরে পার্কে পরিণত হবে এবং পর্যটকদের প্রবেশ এখানে নিষিদ্ধ থাকবে।
শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, ইতালি সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের লিজে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছে ভেনিসের কিছু স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁরা পোভেলিয়া পার টুট্টি’ বা ‘সবার জন্য পোভেলিয়া’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে দ্বীপটিকে জনস্বার্থে রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।
২০১৪ সালে ইতালির রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি সংস্থা এই দ্বীপকে নিলামের তালিকায় তুলেছিল। সে সময় শান্ত পরিবেশ এবং সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে একাধিক সম্পত্তি বিকাশকারী গোষ্ঠী দ্বীপটি কেনার চেষ্টা চালায়। এমনকি ভেনিসের বর্তমান মেয়র লুইজি ব্রুগনারোর সঙ্গে যুক্ত একটি গোষ্ঠীও এটি কেনার জন্য ৫ লাখ ১৩ হাজার ইউরো জোগাড় করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা অনুমোদন পায়নি।
তবে পাত্রিসিয়া ভেক্লানি নামে ভেনিসের এক বাসিন্দার নেতৃত্বে গঠিত ‘পোভেলিয়া পার টুট্টি’ সংগঠন প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার ইউরো সংগ্রহ করে দ্বীপটিকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিতে সক্ষম হয়। এখন দ্বীপটি হবে শুধু ভেনিসবাসীর প্রাকৃতিক নিশ্বাসের জায়গা।
পোভেলিয়ার ইতিহাস ভয়াবহ। ১৮ শতকে বিউবোনিক প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে দ্বীপটি প্লেগ আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইন ঘাঁটিতে রূপ নেয়। প্রাচীন রোমান সামরিক ঘাঁটি হিসেবে শুরু হওয়া এই দ্বীপে পরে কৃষক ও জেলেরা বাস করতেন। প্লেগে আক্রান্তরা এখানে রক্ত ছাড়ানোর মতো আদিম চিকিৎসার মাধ্যমে দিন কাটাতেন। মৃতদের গণকবরে দাফন করা হতো। ইতিহাসবিদদের মতে, এখানে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের কবর হয়েছে।
পরে ১৯ শতকে এখানে একটি মানসিক হাসপাতাল হয়। এখানকার রোগীদের ওপর চালানো হতো অমানবিক পরীক্ষা। ১৯৬৮ সালে হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায় এবং দ্বীপটি পরিত্যক্ত থাকে। পরবর্তীকালে আমেরিকান টিভি শো ‘ঘোস্ট অ্যাডভেঞ্চার’সহ নানা বিদেশি অনুষ্ঠান এটিকে ভূতের দ্বীপ হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
তবে পোভেলিয়া এখন একটি নতুন অধ্যায়ের মুখে। বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা না থাকলেও ভেরোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববিদ্যা গবেষণাগার দ্বীপটির নবায়নের কাজ তত্ত্বাবধান করছে। এই দ্বীপে এখন শুধু ছড়িয়ে থাকা গাছপালা, পুরোনো দুর্গ, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতাল ভবন এবং খরগোশের একটি বড় উপনিবেশ রয়েছে।
মাসিমো পেরা নামে ভেনিসের একজন স্থানীয় সদস্য বলেন, ‘এই জায়গা বেদনার স্মৃতি বহন করে। কিন্তু আমরা এটিকে আনন্দের জায়গায় পরিণত করব।’
বলা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি দ্বীপ রক্ষার নয়; বরং এটি পর্যটননির্ভরতার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের এক ছোট্ট কিন্তু শক্তিশালী বিজয়।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]