শিরোনাম

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাতের দ্বিতীয় দিনে লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাতের দ্বিতীয় দিনে লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে নতুন করে গোলাগুলি শুরু হয়। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের বেশির ভাগই থাইল্যান্ডের বেসামরিক নাগরিক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ১ লাখেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সিএনএন জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনামলে নির্ধারিত সীমান্তে বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক ধর্মীয় স্থাপনা রয়েছে, যা উভয় দেশই নিজেদের দাবি করে।

শুক্রবার ভোর সাড়ে চারটায় কম্বোডিয়ার বাহিনী গুলি ছুড়লে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী পাল্টা কামান ও ভারী অস্ত্রে জবাব দেয় বলে জানিয়েছেন থাই কর্নেল রিচা সুকসুয়ানন। সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু ছিল থাইল্যান্ডের উবন রাচাথানি ও সুরিন প্রদেশের তিনটি পয়েন্ট।

থাই সেনাবাহিনী জানায়, কম্বোডিয়ার দিক থেকে ভারী রকেট হামলার জবাবে তারা বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও মরদেহ উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে।

সংঘর্ষের ভিডিওতে থাই কামানের বিকট শব্দ ও ধোঁয়া দেখা গেছে। সংঘর্ষের প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার কামান ও রকেট উভয়ই ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর থাইল্যান্ড তাদের এফ-১৬ জেট পাঠিয়ে কম্বোডিয়ার ভেতরে ‘সেনা ঘাঁটিতে’ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে।

কম্বোডিয়া দাবি করেছে, থাই সেনাবাহিনী আজ শুক্রবার সকালে দুটি স্থানে ক্লাস্টার বোমাও ব্যবহার করেছে। এই অভিযোগ নিয়ে থাই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সিএনএন আরও জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার ওদার মিনচেই প্রদেশে অন্তত একজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। ওই অঞ্চল থেকে ৪ হাজার জনেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেকেই রাতের আঁধারে গাড়ি বোঝাই করে বাড়ি ছেড়েছেন। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রিপলের নিচে।

থাইল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার রাতেই ১ লাখের বেশি মানুষকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সুরিন প্রদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই মেঝেতে বিছানা করে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এই পরিস্থিতি খুব কষ্টদায়ক। অনেকেই গাড়ি না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতেই পারছেন না।’

এর আগে গত বুধবার সীমান্তে একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন থাই সেনা আহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। গত মে মাসেও একটি সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়েছিলেন।

সংঘর্ষের বিষয়ে থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক থিতিনান বলেছেন, ‘দুই পক্ষই অতীত ইতিহাস নিয়ে ক্ষুব্ধ। থাইদের ধারণা, ফরাসিরা তাদের জমি নিয়ে কলম্বিয়াকে দিয়েছে। অপরদিকে, কাম্বোডিয়ানদের বিশ্বাস, এই ভূমি তাদের প্রাচীন সভ্যতার অংশ।’

সামরিক শক্তির বিচারে কম্বোডিয়ার চেয়ে থাইল্যান্ড অনেক এগিয়ে। তাদের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ৩ লাখ ৬১ হাজার, যা কম্বোডিয়ার তুলনায় তিনগুণ বেশি। তা ছাড়া থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সহায়তাও পাচ্ছে।

তবে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ভুগছে থাইল্যান্ড। চলতি মাসেই একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়। ফোনালাপে তিনি নিজ দেশের সেনাবাহিনীর আচরণ নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন।

এই সংঘর্ষ শুধু সীমান্ত নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতি, ইতিহাস ও শক্তির ভারসাম্যকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ইতিমধ্যেই উভয় পক্ষকেই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button