[ad_1]
শিরোনাম দেখেই হয়তো অনেকের চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। পাথরের দাম এত হয় কীভাবে! কোন জিনিসের দাম কত হবে, তার নির্ধারণ করা হয় সেই জিনিসের গুরুত্ব বুঝে। বুঝতেই পারছেন, এটি সাধারণ কোনো পাথর নয়। এই পাথরটি পৃথিবীতে এসেছে প্রায় ২৫ কোটিরও বেশি কিলোমিটার দূরের মঙ্গল গ্রহ থেকে। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত পাওয়া মঙ্গল গ্রহের সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড এটি।
নাম তার এনডাব্লিউএ ১৬৭৮৮। এটি বিরল, মূল্যবান এবং বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাজাগতিক বস্তু। এর ওজন ২৪ দশমিক ৫ কেজি বা প্রায় ৫৪ পাউন্ড। তুলনা করলে বোঝা যায়, সাধারণত মঙ্গল থেকে আসা উল্কাপিণ্ডগুলো খুবই ছোটখাটো, এক বা দুই কেজি বা তারও কম ওজনের হয়ে থাকে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে আফ্রিকার নিগার দেশের দূরবর্তী আগাদেজ অঞ্চলে এটি আবিষ্কৃত হয়। তারপর এটি নিউইয়র্কে বিখ্যাত নিলামঘর সোথেবি’স-এ তোলা হয়। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এক গোপন পরিচয়ের সংগ্রাহক পাথরটি ৫.৩ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেন যা একে বিশ্বের সবচেয়ে দামী মঙ্গলজাত উল্কাপিণ্ড হিসেবে স্থান দেয়।
সোথেবি’স-এর বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান ক্যাসান্দ্রা হ্যাটন এক বিবৃতিতে জানান, এমন উল্কাপিণ্ড পাওয়ার ঘটনা এক প্রজন্মে একবারই ঘটে। এই আবিষ্কার আমাদের সরাসরি মঙ্গলগ্রহের বিশালতা, রঙ এবং অবিশ্বাস্য গঠন সম্পর্কে জানতে অনেক সাহায্য করেছে। এটি না পেলে হয়তো এই তথ্যগুলো পেতে আমাদের অনেক সময় অপেক্ষায় থাকতে হতো।
এই পাথর যেভাবে পৃথিবীতে এলো
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, লাখ লাখ বছর আগে মঙ্গলগ্রহে একটি বিশাল গ্রহাণুর আঘাতে এই পাথরটি ছিটকে মহাকাশে চলে যায়। সেই সংঘর্ষ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে পাথরের কিছু অংশ গলে কাঁচে পরিণত হয়। পরবর্তীতে সেটি পৃথিবীর দিকে ভেসে আসে এবং বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে মাটিতে আছড়ে পড়ে। প্রবেশের সময় উচ্চ তাপে এর উপরিভাগে গলিত কাচের মতো একটি চকচকে আবরণ তৈরি হয়, যা আজও স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
বিজ্ঞানের জন্য আশীর্বাদ
এই ধরনের উল্কাপিণ্ড বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ভেতরের উপাদান বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় মঙ্গলগ্রহের ভূগঠন, আবহাওয়া এবং অতীত ইতিহাস সম্পর্কে অনেক তথ্য। তবে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন ব্যক্তিগত সংগ্রহে চলে যাওয়া অনেক বিজ্ঞানীর উদ্বেগের কারণ।
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসাট বলেন, ‘এটি যদি কোনো ধনকুবেরের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ঢুকে পড়ে, তাহলে বিজ্ঞান ও সাধারণ মানুষের জন্য তা দুঃখজনক হবে। এই ধরনের বস্তু জাদুঘরে থাকা উচিত, যাতে সবাই দেখতে পারে এবং গবেষকরা তা নিয়ে কাজ করতে পারে।’
অবশ্য অন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লেইসেস্টারের গ্রহবিজ্ঞানী জুলিয়া কার্টরাইট মনে করেন, ‘উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ, বিক্রি ও নিলামের বাজার না থাকলে আমরা এত নমুনা পেতাম না। গবেষণা আর সংগ্রহশীলদের মধ্যে একটি সহাবস্থানের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’ তবে আশার কথা হচ্ছে, এই উল্কাপিণ্ডটির একটি অংশ যাকে ‘রেফারেন্স স্যাম্পল’ বলা হয় সেটি চীনের পার্পল মাউন্টেন অবজারভেটরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য সেটি ব্যবহার করা যাবে।
ভবিষ্যৎ গবেষণার সম্ভাবনা
এবারের বিক্রি হওয়া উল্কাপিণ্ডটি কেবল একটি পাথর নয়, এটি এক ধরনের টাইম ক্যাপসুল। এর মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহের অতীত, মহাকাশের ইতিহাস এবং বিজ্ঞানী ও মানুষের কৌতূহল নিয়েক অনেক অজানা কিছু জানা সম্ভব হয়েছে। পাথরটির খনিজ বিশ্লেষণে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন এটি মূলত আগ্নেয়গিরিজাত শিলা, যাতে রয়েছে পায়রক্সিন, অলিভাইন এবং মাসকেলিনাইট। ভবিষ্যতে এর বিশ্লেষণ থেকে মঙ্গলে পানির উপস্থিতি, প্রাচীন আবহাওয়া বা আগ্নেয়গিরি কার্যকলাপ সম্পর্কেও নতুন কিছু জানা সম্ভব হতে পারে।
নিলামে মঙ্গলগ্রহের পাথর বিক্রি নতুন নয়। এর আগেও ২০২১ সালে মঙ্গলগ্রহের আরেকটি ছোট উল্কাপিণ্ড, যার মধ্যে মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল সংরক্ষিত ছিল, সেটি নিলামে ২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
সূত্র: সিএনএন ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]