[ad_1]
সীমান্তবর্তী এক প্রাচীন শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সম্পর্ক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় এক দশকের মধ্যে ভয়াবহতম সংঘাত। চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কায় বাড়িঘর ছাড়তে হয়ে দুই দেশের প্রায় দেড় লাখ মানুষকে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও ঠেকেছে তলানিতে। কিন্তু মাত্র ৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার ওই সীমান্ত এলাকায় কী এমন আছে যা নিয়ে দশকের পর দশক ধরে বিরোধ চলে আসছে এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে?
দুই দেশের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয় ২০০৮ সালে। আন্তর্জাতিকভাবে ওই ৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার এলাকা ‘বিরোধপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে পরিচিত। মূলত দুটি মন্দিরের মালিকানা নিয়ে বিরোধ দুই দেশের। ২০০৮ সালে ওই দুই মন্দিরের একটিকে (প্রিয়াহ ভিহিয়ার) বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে ইউনেসকোর কাছে আবেদন করে কম্বোডিয়া এবং তা গৃহীতও হয়। তখনই থাইল্যান্ড তীব্র প্রতিবাদ জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতারও কারণ হয়।
সীমান্ত সংঘাতের কেন্দ্রে থাকা ওই দুই মন্দিরের নাম প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দির ও তা মন থম। এগারো শতকের হিন্দু মন্দির এগুলো। প্রায় ৫২৫ মিটার উচ্চতায় দাংরেক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই খেমার স্থাপত্য ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। বৌদ্ধ অধ্যুষিত কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড—দুই দেশের মানুষের কাছেই এই দুই মন্দিরের ধর্মীয় গুরুত্ব অনেক। এটি একদিকে ধর্মীয় ঐতিহ্য, আবার অন্যদিকে জাতীয় গর্ব ও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এই সীমান্ত বিরোধের শিকড় বহু পুরোনো। বিরোধের সূত্রপাত ঔপনিবেশিক আমলের মানচিত্র বিভাজনে। ১৪শ-১৫শ শতকে আধুনিক থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার অনেক অংশ শাসন করত খেমার সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্য পতনের পর থাই ও ভিয়েতনামি রাজ্যগুলো খেমার ভূখণ্ড দখল করতে থাকে। ১৮৬৩ সালে ফ্রান্স যখন কম্বোডিয়াকে উপনিবেশ বানায়, তখন একাধিক চুক্তির মাধ্যমে থাইল্যান্ড (তৎকালীন শ্যাম) বাতামবাং ও শ্যাম রিয়াপসহ একাধিক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে বাধ্য হয়। ১৯০৭ সালে ফরাসিরা যে মানচিত্র তৈরি করে, সেটিই আজকের সীমান্তের ভিত্তি।
ওই মানচিত্রে প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দিরকে কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে দেখানো হয়। তৎকালীন শ্যাম (বর্তমান থাইল্যান্ড) সেই মানচিত্রে সম্মতি দিলেও পরে তারা মত পাল্টায়। তাদের দাবি—তারা ভেবেছিল প্রাকৃতিক জলবিভাজিকা (নদী বা খাল) ধরে সীমান্ত নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু পরে তারা বুঝতে পারে ফ্রান্সের মানচিত্রে প্রাকৃতিক জলবিভাজিকা মানা হয়নি।
এই বিরোধ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) কম্বোডিয়ার পক্ষে রায় দেয়। থাইল্যান্ড ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে এই মানচিত্র থাইল্যান্ড একসময় স্বীকার করেছিল উল্লেখ করে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় আদালত। থাইল্যান্ডকে বিরোধপূর্ণ ওই এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ১৯৫৪ সালের পর মন্দির এলাকা থেকে কোনো প্রত্ন নিদর্শন নিয়ে থাকলে তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে পরবর্তী দশকে আবারও উত্তেজনা বাড়ে। ২০১৩ সালে আইসিজে আগের রায়ের ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, শুধু মন্দির নয়, মন্দিরের আশপাশের এলাকাও কম্বোডিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সেই সঙ্গে আদালত থাইল্যান্ডকে ওই এলাকা থেকেও সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। তবে, থাইল্যান্ড সেই রায় এখনো মেনে নেয়নি।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]