[ad_1]
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১১ জনই বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সেনাসদস্য। এই সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে শতবর্ষের পুরোনো সীমান্ত বিরোধকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সংঘর্ষ শুরু করার জন্য দুই পক্ষ একে অপরকে দায়ী করে। থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে রকেট হামলার অভিযোগ এনে পাল্টা বিমান হামলা চালায়। ফলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কম্বোডিয়া এখনো হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করেনি। তবে দেশটি থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ এনেছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করেছে।
বিরোধের মূল কেন্দ্রে রয়েছে একটি খেমার-হিন্দু মন্দির। এই মন্দিরটিকে ২০০৮ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে চেয়েছিল কম্বোডিয়া ইউনেসকো। থাইল্যান্ড তখন কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে প্রায়ই সীমান্তে সংঘর্ষ ঘটে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা কম হলেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা পরিস্থিতিকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। তবে কোনো কোনো বিশ্লেষক দুই দেশের মধ্যে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
যদি দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে কে এগিয়ে থাকবে তা নিয়ে চলছে বিচার বিশ্লেষণ। সিএনএন জানিয়েছে—থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার তুলনায় অনেক বড় এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রেও অনেক এগিয়ে।
আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আআইএসএস)–এর ‘মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা ৩ লাখ ৬১ হাজার। এই হিসেবে দেশটির সেনা সংখ্যা কম্বোডিয়ার তুলনায় তিন গুণ।
সামরিক শক্তির দিক থেকে থাইল্যান্ড অনেক বেশি উন্নত। আইআইএসএস-এর ভাষ্য অনুযায়ী—থাইল্যান্ডের একটি বড় এবং ভালো অর্থায়ন করা সেনাবাহিনী রয়েছে। দেশটির বিমানবাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সুসজ্জিত ও প্রশিক্ষিত।
যুক্তরাষ্ট্র থাইল্যান্ডকে একটি ‘মেজর নন-ন্যাটো অ্যালাই’ বা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের অস্ত্র কর্মসূচি চালু রয়েছে। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে সামরিক সম্পর্কও জোরদার করেছে থাইল্যান্ড। এ ছাড়া ইসরায়েল, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেনের সহায়তায় দেশীয় অস্ত্র শিল্পও গড়ে তুলেছে দেশটি।
থাই বিমানবাহিনীর কাছে রয়েছে সুইডেনের তৈরি ১১টি আধুনিক গ্রিপেন যুদ্ধবিমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি কয়েক ডজন পুরোনো এফ-১৬ ও এফ-৫ যুদ্ধবিমান। বিপরীতে কম্বোডিয়ার যুদ্ধে অংশ নিতে সক্ষম বিমান নেই বললেই চলে।
৬০টি আধুনিক চীনা ভিটি-৪ ট্যাংকের পাশাপাশি থাইল্যান্ডের কাছে শত শত পুরোনো মার্কিন ট্যাংকও রয়েছে। বিপরীতে কম্বোডিয়ার আছে প্রায় ২০০টি পুরোনো চীনা ও সোভিয়েত নির্মিত ট্যাংক।
থাই সেনাবাহিনীর কাছে আছে ৬০০ টির বেশি কামান। এর মধ্যে ৫৬টি শক্তিশালী ১৫৫ মিমি কামান এবং ৫৫০ টির বেশি ১০৫ মিমি টোড গান। বিপরীতে কম্বোডিয়ার হাতে আছে মাত্র ১২টি ১৫৫ মিমি কামান এবং প্রায় ৪০০টি অপেক্ষাকৃত ছোট কামান।
থাই সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি কোবরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং ১৮টি ব্ল্যাক হক ট্রান্সপোর্ট হেলিকপ্টার। আর কম্বোডিয়ার হেলিকপ্টার বহর পুরোনো সোভিয়েত ও চীনা মডেলের।
এ ছাড়া থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়ায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘কোবরা গোল্ড’, যা থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড যৌথভাবে আয়োজন করে। এটি ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হয়ে আসা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়া।
সব মিলিয়ে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী কম্বোডিয়ার তুলনায় বহুগুণ শক্তিশালী, সুসজ্জিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি সম্পৃক্ত।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]