[ad_1]
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে রাজশাহী শহর থেকে স্ত্রী, দুই সন্তানসহ ৮ জুন কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছিলেন চাকরিজীবী শাহীনুর রহমান (৫৫)। দুপুরে ছেলে সিফাত রহমানকে (২০) নিয়ে সমুদ্রসৈকতের কলাতলীর সায়মন বিচে গোসলে নামেন তিনি। গোসলের একপর্যায়ে সিফাত সমুদ্রের দিকে ভেসে যেতে থাকেন। ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে যান শাহীনুর। প্রাণপণ চেষ্টা করেও বাবা-ছেলে সৈকততীরে আর ফিরতে পারেননি।
শাহীনুরের পরিবারের মতো ভ্রমণে এসে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমে গুপ্তখাল বা উল্টো স্রোতে পড়ে প্রায়ই পর্যটকের প্রাণহানি ঘটছে। চলতি মাসের ৮ ও ৯ জুন গোসলে নেমে বাবা-ছেলেসহ তিন পর্যটক, দুই রোহিঙ্গা কিশোর ও স্থানীয় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবছর গোসলে নেমে সৈকতে পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটলেও এ পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারি কোনো দপ্তরে নেই। পাশাপাশি নেই কোনো প্রতিরোধব্যবস্থা। সৈকতে দায়িত্বরত বেসরকারি সংস্থা সি-সেফ লাইভ গার্ডের দেওয়া তথ্যমতে, এক দশকে কেবল শহরের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী ও সিগাল পয়েন্টে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ৭৭৫ জন।
গুপ্তখালে অসতর্ক পর্যটক
কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বড় অংশ সাগরের নোনাজলে গা ভেজাতে চায়। কিন্তু বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় এ সৈকতে শহরের কবিতা চত্বর থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার জায়গায় কেবল গোসলে নেমে বিপদের সম্মুখীন হওয়া পর্যটকদের উদ্ধারের ব্যবস্থা আছে। বাকি সৈকতের কোথাও এ তৎপরতা নেই। দীর্ঘ সৈকতের বিভিন্ন স্থানে এখন গুপ্তখাল তৈরি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সৈকতের যেসব স্থানে গুপ্তখাল আছে, সেখানে গোসল থেকে বিরত থাকতে লাল নিশানা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মাইকিং করে সতর্ক করা হয়। কিন্তু পর্যটকদের বড় অংশ সতর্কতা না মেনে গোসলে নেমে বিপদে পড়ছে।
টানা বা বিশেষ ছুটিতে শহরের লাবণী থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ পর্যটক সৈকতে নামে। পাঁচ কিলোমিটার এ সৈকতে পালা করে দায়িত্ব পালন করেন সি-সেফ লাইফ গার্ডের ২৬ জন কর্মী। এ সময় গোসলে নামা বিপুলসংখ্যক পর্যটককে নজরদারিতে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানান সি-সেফের ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
গুপ্তখাল নিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানীদের ভাষ্য
উল্টো স্রোত বা গুপ্তখাল কীভাবে সৃষ্টি হয়, তা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সচিব এবং বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) সাবেক মহাপরিচালক সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরের। তিনি বলেন, ‘গুপ্তখাল সমুদ্রের এক বিশেষ ধরনের স্রোত। যেটি সমুদ্রসৈকতে তৈরি হয়। যখন খুব উচ্চ এবং ঘন ঘন ঢেউ সৈকতে এসে আঘাত করে; তখন সৈকতে বেশ কিছু পানি জমা হয়। এই জমে থাকা পানি ফিরে যাওয়ার সময় একটি সংকীর্ণ চ্যানেলের মাধ্যমে খুব দ্রুত সাগরে ফিরে যায়; এটিই মূলত গুপ্তখাল।
সাঈদ মাহমুদ বলেন, সাধারণত সমুদ্রের তলদেশ যদি অসমতল কিংবা খাঁজ কাটার তীর রেখা থাকে, তাহলে গুপ্তখাল সহজে তৈরি হয়। এ ছাড়া যখন খারাপ আবহাওয়া থাকে এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সময়ে সমুদ্রে যখন খুব উচ্চ মাত্রায় ঢেউ থাকে, তখনো তৈরির আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, এটি তৈরিতে বাতাসেরও প্রভাব রয়েছে। যদি উপকূলে সমান্তরালভাবে বাতাস বইয়ে যায় এবং এই সমান্তরাল বাতাসের কারণে তরঙ্গের ওপর যে প্রভাব পড়ে, তাতেও তৈরি হতে পারে।
একজন দক্ষ সাঁতারুও যদি এই গুপ্তখালে আটকা পড়েন, তাহলে তাঁরও রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় থাকে না। সাঈদ মাহমুদ বলেন, এতে আটকে পড়লে সাঁতার কেটে কূলে ফিরে আসার চেষ্টা করা যাবে না। আটকে পড়া ব্যক্তিকে শান্ত থাকতে হবে। পানিতে ভেসে থাকতে হবে। বাঁয়ে বা ডানে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তিনি মনে করেন, গত কয়েক বছরে কক্সবাজার সৈকতের দুর্ঘটনার প্রায় সবগুলো গুপ্তখালের কারণে হয়েছে।
উপকরণ ও লাইফ গার্ড বাড়ানোর উদ্যোগ
সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ১২০ কিলোমিটার সৈকতে সবখানে পর্যটক নামে না। এর মধ্যে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে, তা চিহ্নিত করে পর্যটকদের সতর্ক করতে কাজ করেন লাইফ গার্ড, বিচ কর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। কিন্তু পর্যটকেরা সতর্কতা অবলম্বন না করে ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নেমে বিপদে পড়েন।’ উদ্ধার তৎপরতার সরঞ্জাম অপ্রতুল জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সৈকতের যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি হয়, সেখানে লাইফ গার্ড সদস্য বাড়ানো, প্রয়োজনীয় উদ্ধার সামগ্রী ও মেডিসিন সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]