সাউথ কলকাতা ল কলেজের এক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মদন মিত্র। তাঁর মন্তব্যে মনে হচ্ছে, তিনি ঘটনার জন্য আংশিকভাবে হলেও ভুক্তভোগী নারীকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, মেয়েটি যদি প্রথমে ঘটনাস্থলে না যেত, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না।

বুধবার (২৫ জুন) কলকাতার কসবা এলাকার সাউথ কলকাটা ল কলেজে ২৪ বছর বয়সী এক আইনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মনোজিত মিশ্র (৩১) নামে ওই কলেজের সাবেক ছাত্রনেতাকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৯ বছর বয়সী জাইব আহমেদ এবং ২০ বছর বয়সী প্রমিত মুখোপাধ্যায় নামের দুই শিক্ষার্থী এবং একজন নিরাপত্তাপ্রহরীও এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকার করেছে, মনোজিত মিশ্র একসময় দলের ছাত্র শাখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে দল তাঁর এই ঘৃণ্য কাজের জন্য কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এদিকে বিজেপি মনোজিত মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূলের সিনিয়র নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ছবি শেয়ার করেছে।

শনিবার এ ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মদন মিত্র বলেছেন, ‘যদি মেয়েটি সেখানে না যেত, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। যদি সে কাউকে বলত যে সে কোথায় যাচ্ছে, যদি দুজন বন্ধুকে সঙ্গে নিত, তাহলে এমনটা ঘটত না। যারা অপরাধ করেছে, তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। মেয়েটি কলেজে যাওয়ায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে।’

মদন মিত্রের মন্তব্যের আগে তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বিতর্কিত মন্তব্য আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি আপাতদৃষ্টে এই অপরাধকে হালকা করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। শনিবার তিনি বলেন, ‘যদি একজন বন্ধু তার বন্ধুকে ধর্ষণ করে, তাহলে কী করা যেতে পারে? পুলিশ কি স্কুলে থাকবে? এটা ছাত্রদের দ্বারা অন্য একজন ছাত্রীর ওপর করা হয়েছে। কে তাকে (ভুক্তভোগীকে) রক্ষা করবে? এসব অপরাধমূলক কাজ এবং শ্লীলতাহানি কে করে? কিছু পুরুষ করে। তাহলে মহিলাদের কার বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত? মহিলাদের এই বিকৃত পুরুষদের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি বারবার একই কথা বলছি। যে এটি করেছে, তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। কিন্তু যদি একজন বন্ধু একজন বন্ধুকে ধর্ষণ করে, তাহলে সেটা কীভাবে অপরাধ হতে পারে? নিরাপত্তা পরিস্থিতি সব জায়গাতেই একই রকম। যত দিন পুরুষদের মানসিকতা এমন থাকবে, তত দিন এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’

বিজেপি এই বিতর্কিত মন্তব্যগুলো লুফে নিয়েছে। তারা বলছে, এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের মানসিকতার প্রতিফলন। তারা অপরাধীর শাস্তি দাবির বদলে ভুক্তভোগীর ‘চরিত্র হনন’ করছে।

বিজেপির মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। যেহেতু মূল অভিযুক্ত একজন তৃণমূল নেতা, তারা ভুক্তভোগীর চরিত্র হননের চেষ্টা করবে। তারা জিজ্ঞাসা করবে, কেন সে অসময়ে সেখানে গিয়েছিল, কেন সে একা গিয়েছিল, কেন সে তার বন্ধুদের বিশ্বাস করেছিল—এসব প্রশ্নের উত্তর হলো, কেন একজন তৃণমূল ছাত্র নেতা অসময়ে কলেজে ছিল। কেন তাকে কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল? এটা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার।’

তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মদন মিত্রের মন্তব্যের থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তারা বলেছে, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়ে তাদের শূন্য সহনশীলতা রয়েছে।

দলটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সাউথ কলকাতা ল কলেজের জঘন্য অপরাধ সম্পর্কে সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মদন মিত্রের মন্তব্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। দল তাঁদের মন্তব্যের জন্য দায়ী নয় এবং এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এই মতামতগুলো কোনোভাবেই দলের অবস্থান প্রতিফলিত করে না। মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যেকোনো অপরাধের বিষয়ে আমাদের শূন্য সহনশীলতা রয়েছে। আমরা এই জঘন্য অপরাধে জড়িত সকলের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’

দলের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র বলেছেন, ভারতীয় রাজনীতিতে নারীবিদ্বেষ ব্যাপক। তৃণমূল ভিন্ন; কারণ, তারা এই ধরনের মন্তব্যের নিন্দা করে। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘ভারতে নারীবিদ্বেষ দলীয় সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। @AITCofficial-কে যা আলাদা করে তা হলো, যে-ই মন্তব্য করুক না কেন, আমরা এই জঘন্য মন্তব্যের নিন্দা করি।’