[ad_1]
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ১৩ বছর আগে ১০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা হয়। এর মধ্যে একটি শয্যা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। এখন ৯ শয্যার ইউনিটই পুরো রংপুর বিভাগের দুই কোটির বেশি মানুষের একমাত্র সরকারি আশ্রয়স্থল।
রমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় চালু করা হয় ১০ শয্যার আইসিইউ সেন্টার। ডায়ালাইসিস মেশিনসহ বেশ কিছু অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় ইউনিটটি নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেই চলছে। তারপরও একটি শয্যা ফাঁকা হলেই প্রতিদিন অন্তত পাঁচজন রোগীর স্বজন ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসেন সেখানে ভর্তির আশায়। কিন্তু সংকট এতটাই তীব্র যে অধিকাংশ সময়ই ফিরিয়ে দিতে হয় তাঁদের।
সরকারি আইসিইউতে স্থান না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হন বেসরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে। কিন্তু সেখানে প্রতি রাতের বিলই ১৫-২০ হাজার টাকা। ফলে চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অনেক পরিবার। অনেক ক্ষেত্রেই দরিদ্র রোগীদের প্রাণ হারাতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে।
গত মঙ্গলবার বৃদ্ধ বাবার জন্য আইসিইউ শয্যা খুঁজতে এসে ফিরে যান গাইবান্ধার আনোয়ার হোসেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আইসিইউ সেন্টারে কোনো রোগী নাই। সবাইকে সরাই নিছে, কী জানি সমস্যা। দুই দিন ধরি ঘুরছি একটি শয্যাও ফাঁকা নাই। বাবার বুকের সমস্যা খুব বেড়ে গেছে। বাইরে খোঁজ নিলাম ১৫ হাজার টাকা লাগে। এত টাকা কই পাব। এত বড় সরকারি হাসপাতালে একটা আইসিইউ শয্যা নাই।’
গত সোমবার আইসিইউতে থাকা কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা এলাকার মহুবার রহমানের ধনুষ্টঙ্কার শনাক্ত হয়। এ ঘটনার পর তাঁকে আইসিইউ থেকে সরিয়ে আইসোলেশন বিভাগে নেওয়া হয়। সংক্রমণ এড়াতে আইসিইউ ইউনিটটি পরিষ্কার করার জন্য সব রোগীকে সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হয়। এতে সংকটের বিষয়টি সামনে আসে।
চার দিন ঘুরে একটি আইসিইউ শয্যা পেয়েছেন লালমনিরহাটের বদরুদ্দোজা বিশাল (২১)। তিনি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। মঙ্গলবার তাঁর মা বিলকিস বেগম বলেন, ‘এখানে আইসিইউ পাওয়া জীবন ফিরে পাওয়ার মতো। অনেক অপেক্ষার পর একটি শয্যা পেয়েছি। ছেলে এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। গতকাল নাকি ভাইরাস ধরা পড়ছে। আইসিইউ থেকে সব রোগীকে সরে নিছে। এত বড় হাসপাতাল আইসিইউ কেন অল্প।’
আরেক রোগীর স্বজন সোহাগ আলী বলেন, ‘বাইরে এক দিন আইসিইউ খরচ সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা। তিন দিন অপেক্ষার পর হাসপাতালে স্ত্রীর জন্য আইসিইউ শয্যা পেয়েছি। সমস্যার কারণে এখন তাঁকে অন্য ওয়ার্ডে কালকে নিয়েছি।’
রমেক হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহেল বারী বলেন, ‘আমাদের চেষ্টার ঘাটতি নেই, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা একেবারে সীমিত। আইসিইউ শয্যাসংখ্যা অপ্রতুল, প্রশিক্ষিত জনবলও পর্যাপ্ত নয়। এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রায় প্রতিদিনই মানবিক দোটানায় পড়ি।’
হাসপাতালে কথা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাহেবগঞ্জ ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রংপুর বিভাগের আটটি জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষ চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। অথচ ১৩ বছরেও আইসিইউ শয্যা বাড়েনি একটিও। এমনকি জীবন রক্ষাকারী আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতা এবং জনবলসংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দ্রুত আইসিইউ শয্যাসংখ্যা বাড়ানো, পূর্ণাঙ্গ লাইফ সাপোর্ট সুবিধা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
রমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘আইসিইউ শয্যাসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আইসিইউ সংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয় জানে। প্রতিদিন রোগীর চাহিদা অনেক বেশি থাকে। আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা হলে মোটামুটি ভালোভাবে আমরা ট্যাকল করতে পারব।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]