[ad_1]
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে জয়ী হওয়ার পর থেকেই ইসলামবিদ্বেষী আক্রমণের শিকার হচ্ছেন জোহরান মামদানি। তিনি ‘হামাস সমর্থক’, ‘জিহাদি সন্ত্রাসী’, আমেরিকা থেকে বের করে দেওয়ার দাবি এবং নিউইয়র্কে আরেকটা ৯ / ১১ হামলার ভবিষ্যদ্বাণী—এসব ইসলামবিদ্বেষী আক্রমণের ঢল নেমেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমনকি ডানপন্থী রাজনৈতিক মহল সরাসরিই তাঁর বিরুদ্ধে এমন আক্রমণ শুরু করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ৩৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য এবং একজন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট। তিনি নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হতে যাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যেই তাঁকে ঘিরে ভয়াবহ রকমের ঘৃণা, বর্ণবিদ্বেষ ছড়িয়েছে। এমনকি তাঁকে মৃত্যুর হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। এসব আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিপাবলিকান দলের বড় বড় নেতাসহ অসংখ্য অনলাইন কর্মী।
এই আক্রমণগুলো যে কেবল কয়েকজন উগ্র ডানপন্থী কর্মীর কাজ নয়, বরং তা পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক মহলের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটাই পরিষ্কার হচ্ছে ধীরে ধীরে। মামদানির অভিবাসী পরিচয়, মুসলিম ধর্মবিশ্বাস এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক অবস্থানকে একসঙ্গে মিশিয়ে তাঁকে ‘সভ্যতার জন্য হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।
ডানপন্থী কর্মী এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত লরা লুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে আবার ৯ / ১১ ঘটবে।’ নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিল সদস্য ভিকি পালাদিনো এক রেডিও সাক্ষাৎকারে মামদানিকে ‘পরিচিত জিহাদি সন্ত্রাসী’ এবং ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যা দেন। তিনি মামদানির মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং ব্যাপকভাবে বিতর্কিত অভিবাসন নীতির নায়ক স্টিফেন মিলারও এ আক্রমণে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো সমাজ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে কী হয়, নিউইয়র্ক সিটি হলো তার স্পষ্ট উদাহরণ।’ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মার্কিন আইনপ্রণেতা এলিস স্টেফানিক মামদানির বিরুদ্ধে প্রাথমিক নির্বাচন ঘোষণার আগেই অর্থ সংগ্রহের ই-মেইলে তাঁকে ‘হামাস-সন্ত্রাসের সমর্থক’ বলে প্রচার করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এক পোস্ট শেয়ার করেন যেখানে লেখা ছিল, ‘আমি সেই সময়ের কথা মনে করি যখন নিউইয়র্কের মানুষ ৯ / ১১—এর মুখোমুখি হতো, এখন তারা নিজেরাই ভোট দিয়ে সেটা ডেকে আনছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘নিউইয়র্ক সিটি শেষ হয়ে গেছে।’ রাজ্য আইনপ্রণেতা মার্জোরি টেইলর গ্রিন এক এআই-নির্মিত ছবি পোস্ট করেন যেখানে দেখা যায়, স্ট্যাচু অব লিবার্টি বোরকা পরে আছে। আর ডানপন্থী ভাষ্যকার ম্যাট ওয়ালশ আফসোস করে বলেন, নিউইয়র্ক এখন ‘আর আমেরিকান শহর নয়’, কারণ শহরের ৪০ শতাংশ মানুষ অভিবাসী।
আমেরিকার রাজনীতি নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের কাছে এসব আক্রমণের তীব্রতা হয়তো বিস্ময়কর। তবে এর পেছনের পুরোনো কৌশল একেবারে নতুন নয়। মুসলিম বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’, ‘সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র’ এবং ধর্মীয় পরিচয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা ২০০১ সালের ৯ / ১১-এর পর থেকেই চলে আসছে। ২০০৬ সালে মিনেসোটার সাবেক কংগ্রেসম্যান এবং বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল কিথ এলিসনের ক্ষেত্রেও একই কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছিল।
আমেরিকার মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কেয়ারের গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি পরিচালক কোরি সাইলর দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমরা যেসব প্রবণতা দেখছি, তা সাধারণ ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যের প্রতিফলন—মুসলিমদের আদার বা অন্য কেউ বা হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করা।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘২০১০ সালের গ্রাউন্ড জিরোর কাছে ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণ নিয়ে যে ধরনের জাতীয় বিতর্ক হয়েছিল, ঠিক তেমন কিছুই আবার ঘটতে পারে।’
কেয়ার জানিয়েছে, তারা অনলাইনে ইসলামবিদ্বেষী ঘটনার পরিসংখ্যান রাখে না। তবে মামদানি নিয়ে চলমান বিদ্বেষের মাত্রা ‘উল্লেখযোগ্য’ বলে তারা মনে করে।
এই প্রবণতা এমন এক সময়ে চাগিয়ে উঠেছে, যখন পুরো আমেরিকায় রাজনৈতিক সহিংসতার প্রবণতা বাড়ছে। মামদানি নিজেই জানিয়েছেন, প্রচারণার শেষ দিকে তাঁর গাড়িতে বোমা হামলার হুমকিসহ একাধিক মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন তিনি। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ঘৃণা প্রসূত অপরাধ তদন্ত ইউনিট এসব ঘটনা খতিয়ে দেখছে। এমন এক হুমকিতে ইসরায়েল-লেবানন সংঘর্ষে ব্যবহৃত বিস্ফোরক পেজারের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে মামদানির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এসব আক্রমণ তার ব্যক্তিগত জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। গত সপ্তাহে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মামদানি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এমন বার্তা পাই যেখানে লেখা থাকে, “ভালো মুসলিম শুধু মৃত মুসলিম। ” আমার নিজের জীবন এবং আমার প্রিয়জনদের জীবন নিয়ে হুমকি আসে।’ তিনি বলেন, ‘আমি এই শহরকে সবার জন্য বাসযোগ্য করার জন্য কাজ করি। এমন এক শহর গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি নিউ ইয়র্কবাসী নিজেকে দেখতে পায়।’
ট্রাম্পও বুধবার মামদানির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তিনি মামদানিকে ‘শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ’ বলে মন্তব্য করেন এবং তাঁর চেহারা ও কণ্ঠস্বর নিয়েও কটাক্ষ করেন। যদিও তিনি সরাসরি মামদানির ধর্ম বা জাতিগত পরিচয় নিয়ে কিছু বলেননি, তবে তিনি আবারও সিনেটর চাক শুমারকে ‘ফিলিস্তিনি’ বলে অপমান করেন।
প্রাথমিক নির্বাচনের শুরু থেকেই মামদানিকে লক্ষ্য করে ইসলামবিদ্বেষী আক্রমণের ধারাবাহিকতা ছিল। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে চাপ দেওয়া হয়, যেখানে অন্য প্রার্থীদের তেমন প্রশ্ন করা হয়নি। এমনকি, কোন দেশ প্রথম সফর করবেন, এই প্রশ্নের জবাবে অন্যরা বিভিন্ন দেশের নাম বললেও মামদানি বলেন, তিনি নিউইয়র্কেই থাকবেন এবং ইসরায়েলের এমন একটি রাষ্ট্র হওয়া উচিত, যেখানে সবার জন্য ‘সমান অধিকার’ থাকবে।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এমএসএনবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, ‘আমি নিউইয়র্কের বহু মুসলিমের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই বলেছেন, নিজেদের জীবনকে লুকিয়ে রাখা, ছায়ার আড়ালে থাকা—যেন জীবনের ঝুঁকিতে থাকা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, প্রকাশ্যে এলেই “সন্ত্রাসী” তকমা জুটে যায়। এভাবে কোনো শহর বা কোনো দেশ চলতে পারে না।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]