[ad_1]
যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও ১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই ভাবিয়ে তুলছে—বাড়ছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা। আমাদের দেশেও এই সংঘাতের প্রভাব যে পড়বে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইতিমধ্যেই আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণাম ভোগ করেছি—বিশ্ববাজারের প্রভাবে বেড়েছে দেশীয় বাজারের পণ্য ও সেবামূল্য। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নাকানিচুবানি খাইয়ে ছেড়েছে ভোক্তাদের। আর এখন ইরানের মতো তেল রপ্তানিকারক একটি দেশ যখন যুদ্ধের মধ্যে, তখন বিশ্ববাজারে এর প্রভাব তো পড়বেই, বাংলাদেশকেও এই তালিকার বাইরে রাখা যাবে না।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন পথগুলোর একটি হলো ওমান ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত হরমুজ প্রণালি। ইরানের ‘তুরুপের তাস’ নামে পরিচিত এই জলপথ দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত তেলের প্রায় ২০ শতাংশ পরিবহন হয়। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং ইরানে মার্কিন হামলার ফলে এরই মধ্যে হরমুজ প্রণালি এড়িয়ে চলছে তেলবাহী ট্যাংকারগুলো। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে সরাসরি এই পথ বন্ধ করার কোনো ঘোষণা আসেনি কিন্তু অল্প দিন হলেও যদি এই পথে তেল পরিবহন ব্যাহত হয়, তাহলে বিশ্ববাজারে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা করতে হয়। শুধু পরিবহনে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় ২৩ জুন থেকেই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে কাতার ও ওমান থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি) আসে এ দেশে। হরমুজ প্রণালি দিয়েই আসে। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি তেল-গ্যাস তথা জ্বালানির দাম বাড়ে, তাহলে দেশে নিশ্চিতভাবেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে শিল্প উৎপাদন, পরিবহন, কৃষি ও খুচরা বাজারে। ফলে বাড়বে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি এবং জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়।
এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমাদের দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির জালে জড়িয়ে আছে। এখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের যুদ্ধবিরতি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ইসরায়েল তাদের ওপর ইরানের হামলার দাবি করছে। যদি সংঘাত আবার শুরু হয় এবং হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তা দুশ্চিন্তার বিষয়।
হরমুজ প্রণালি বন্ধ না হলেও এই সংঘাত যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে পুরো বিশ্ববাণিজ্যই ব্যাহত হবে। তৈরি পোশাকশিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি আয় পড়বে বিপর্যয়ের মুখে। অতএব, ভোক্তাপর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দ প্রভাবই পড়বে।
বিলম্ব এড়িয়ে বাংলাদেশ সরকারের নড়েচড়ে বসা উচিত। আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সামাল দিতে খুঁজতে হবে বিকল্প জ্বালানির উৎস। এ ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে। আবার জ্বালানি কিংবা পোশাক খাতে অন্য দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা যেতে পারে। আর মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন করে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার জন্য রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া ভিন্ন উপায় নেই।
কোনো যুদ্ধ বা সংঘাতের প্রভাব এড়াতে হলে কঠোর প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি—এটা আমরা এত দিনে নিশ্চয়ই শিখে গেছি।
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]