[ad_1]
বহুল আলোচিত বরগুনার চাঞ্চল্যকর শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর আজ ২৬ জুন পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৯ সালের এই দিনে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে প্রকাশ্যে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে কিশোর গ্যাং ‘বন্ড বাহিনী’।
মামলায় ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ওই বছরের ৪ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছায়। পরে ৬ অক্টোবর মিন্নিসহ অন্য আসামিরা আপিল করেন। তবে এখনো আপিলের রায় হয়নি।
এর পর থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন রিফাতের বাবা-মা। তাঁরা অপেক্ষায় আছেন ছেলে হত্যার রায় কার্যকর দেখতে। রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, জীবিত থাকতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে চাই। এত দিন হয়ে গেল, প্রধান আসামির ফাঁসির রায় এখনো কার্যকর করা হয়নি। আমি সরকারের কাছে প্রার্থনা জানাই, দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর করার ব্যবস্থা করুন।’
অন্যদিকে ফাঁসির আসামি মিন্নির বাবা হাইকোর্ট থেকে মেয়েকে মুক্তি অথবা শাস্তি লাঘবের জন্য আইনি চেষ্টা করছেন। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়েকে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিপক্ষে আপিল করেছি। আশা করি, তার শাস্তি লাঘব হবে।’
জানা গেছে, ঘটনার পর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ মামলায় প্রথমে পুত্রবধূ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেন। পরে পুলিশের তদন্তে মিন্নি হয়ে যান হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী। এ জন্য পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এ মামলায় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত মিন্নিসহ ছয়জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। এরপর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৬ জুন দিনদুপুরে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কোপানোর ঘটনার একটি রোমহর্ষক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী মিন্নিকে আনতে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে যান রিফাত। কিছুক্ষণ পর কলেজগেটে বন্ড বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে প্রকাশ্যে কোপানো শুরু করেন। দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছেন। তাঁর স্ত্রী মিন্নি এসে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। পরে রিফাতকে উদ্ধার করে বরগুনা সদর হাসপাতালে, সেখান থেকে পরে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ওই দিন বিকেলে রিফাতের মৃত্যু হয়।
ঘটনার পরদিন ২৭ জুন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বরগুনা সদর থানায় নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে এক নম্বর সাক্ষী করা হয়।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ছয় দিন পর ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি বন্ড বাহিনীর প্রধান সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সেদিন ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পূর্ব বুড়িরচর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নির জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ।
এ ঘটনায় রিফাত শরীফের বাবা ৬ জুলাই মিন্নিকে আসামি করার জন্য বরগুনা থানায় আবেদন করেন। পরে পুলিশের তখনকার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ১৬ জুলাই প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে গ্রেপ্তার করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এতে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ককে আসামি করা হয়।
এরপর ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অন্য চারজনকে খালাস দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদীপক্ষের তৎকালীন আইনজীবী মুজিবুল হক কিসলু বলেন, ‘আদালতে প্রকৃত ঘটনা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি এবং ন্যায়বিচার পেয়েছি। তবে এখন রায় কার্যকর হওয়া বা না-হওয়া আদালতের বিষয়।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]