শিরোনাম

মহামারিতে বেশি ক্ষতির শিকার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবী নারীরা: আইসিডিডিআরবি

মহামারিতে বেশি ক্ষতির শিকার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবী নারীরা: আইসিডিডিআরবি

বাংলাদেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি কর্মজীবী নারী অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, যাঁরা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

আইসিডিডিআরবির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) ‌‘উইম্যান রাইজ’ শীর্ষক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শহরের অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলোতে বসবাসকারী কর্মজীবী ​​নারীদের মধ্যে বৈশ্বিক মহামারি প্রস্তুতির জন্য সিস্টেম শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণায় মূল ফলাফল ও নীতিগত সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

গবেষণায় সহযোগিতা করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কানাডার সিককিডস। এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার।

সেমিনারে জানানো হয়, আইসিডিডিআরবির গবেষক ড. সোহানা শফিকের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘উইম্যান রাইজ’ গবেষণাটি করোনা মহামারির আগে, চলাকালীন ও পুনরুদ্ধারের সময় বস্তি ও কারখানায় কর্মরত নারীদের অভিজ্ঞতা গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছে।

ঢাকা ও গাজীপুরে আইসিডিডিআরবির আরবান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সারভেইল্যান্স সিস্টেম সাইট এবং গাজীপুরের ছয়টি তৈরি পোশাক কারখানায় এই গবেষণা চালানো হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, সীমিত সম্পদের শহুরে পরিবেশে জেন্ডার, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যের পারস্পরিক প্রভাব বোঝা।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলোতে বসবাসকারী কর্মজীবী ​​নারীদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের বিস্তার পথ সম্পর্কে জ্ঞান ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান বেড়েছে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। হাত ধোয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জ্ঞানও মহামারির আগের সময়ের তুলনায় বেড়েছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অনুশীলন সামগ্রিকভাবে ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। কর্মজীবী ​​নারীদের মধ্যে খাদ্যের বৈচিত্র্য ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে, বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মধ্যে এটি বাড়ার প্রবণতা বেশি।

সেমিনারে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই গবেষণার ফলাফল আমাদের সবাইকে ভবিষ্যতের যেকোনো মহামারির জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে। আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা আবারও বাড়ছে। তবে এটি আমাদের চলমান কাজগুলোকে আরও পরিশুদ্ধ ও সমৃদ্ধ করারও একটি সুযোগ।’

ড. সোহানা গবেষণার মূল দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি দেখান, কীভাবে কোভিড-১৯ মহামারিতে বস্তি ও কারখানায় কর্মরত নারীরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে পড়েছিলেন এবং শহুরে স্বাস্থ্যসেবায় কী ধরনের ফাঁকফোকর ছিল। পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে প্রয়োগ করা বিশেষ উদ্যোগগুলো কীভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানান।

গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির কারণে নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মাতৃ, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেমন—মিরপুর বস্তির এক ২৮ বছর বয়সী গৃহকর্মী জানান, মহামারির সময় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে খরচের চাপে তাঁকে কানের দুল বিক্রি করতে হয়েছে এবং ঋণ নিতে হয়েছে, যার ফলে তাঁর মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এর পরোক্ষ প্রভাব হিসেবে কর্মসংস্থান কমেছে এবং খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button