[ad_1]
নগদ টাকার সঙ্গে ঘুষ হিসেবে ঘুমানোর জন্য খাট নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল হুদা তালুকদারের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ঘুষ আদায় করতে উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে তৈরি করেছেন সিন্ডিকেট। আর স্কুল পরিদর্শনে গেলে তাঁকে দুপুরে দিতে হয় রাজকীয় খাবার। এমন সব অভিযোগ তুলে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র পালের কাছে লিখিত দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা উল্লেখ করেন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নুরুল হুদা তালুকদার ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে এখানে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি ঘুষ আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘুষ আদায় অব্যাহত রেখেছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালে ৯৯ শিক্ষকের বেতন-ভাতার সঙ্গে তৎকালীন ঘোষিত একটি টাইম স্কেল সংযোজন না হওয়ায় ওই শিক্ষকেরা সমতা হারে বেতন-ভাতা পাচ্ছিল না। চলতি অর্থবছরে ওই শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সঙ্গে টাইম স্কেল সংযোজন করে বেতন-ভাতা সমতার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন এই কর্মকর্তা। একইভাবে ২০০৩ সালের ঘটনায় ৪৯ শিক্ষকের বেতন-ভাতার সঙ্গে টাইম স্কেল সংযোজন করে সমতার কথা বলে ১ হাজার করে ৪৯ হাজার টাকা আদায় করেন। আর এসব অনৈতিক কাজে তাঁকে সহায়তা করেন তাঁর তৈরিকৃত সিন্ডিকেট উপজেলার কাশিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারুক আহাম্মেদ, পাঁচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাছরিন আক্তার এবং ধনুসাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, ‘আমরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত নই।’
ভুক্তভোগীরা অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, এই কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রামে যোগদানের পর কোয়ার্টারে ঘুমানোর জন্য মিজানুর রহমান নামের এক শিক্ষক নেতাকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মূল্যবান একটি খাট ঘুষ নিয়েছেন। এ ছাড়া পিআরএল, পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা উত্তোলনের সময় ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা তাঁকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ না দিলে তিনি ফাইলে স্বাক্ষর করেন না।
এদিকে ২০২৫ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকলেও পুরস্কার ক্রয় করার জন্য প্রত্যেক স্কুল থেকে চাঁদা আদায় করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া শিক্ষকদের অনলাইনে বদলির আবেদনে টাকা না দিলে সুপারিশ করেন না তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ নুরুল হুদা তালুকদার বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাওয়ার আগে পরিদর্শনকৃত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দুপুরে তাঁর জন্য খাবারের আয়োজন করতে বলে থাকেন। দুপুরবেলা তাঁর জন্য রাজকীয় খাবারের ব্যবস্থা না থাকলে অভিমান করে পরিদর্শন অসম্পূর্ণ রেখে চলে আসেন। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় দিবস উপলক্ষে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নাম ভাঙিয়ে কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। এতে তাঁরা অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁদের হুমকিধমকি দেন। পরে তাঁকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ‘বিভিন্ন অজুহাতে এই কর্মকর্তা তাঁদের হয়রানি করে আসছেন। বেতন-ভাতার সমতার কথা বলে তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ নিচ্ছেন। তাঁকে এই কাজে সহযোগিতা করছেন তাঁর তৈরিকৃত সিন্ডিকেটের সদস্যরা।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল হুদা তালুকদার বলেন, ‘বেতন-ভাতা সমতার কথা বলে আমি কারও
থেকে ঘুষ গ্রহণ করিনি।’ সিন্ডিকেটের অভিযোগকে তিনি অস্বীকার করেন। আর ঘুষ হিসেবে খাট গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিষয়ে আনীত অভিযোগগুলো সত্য নয়।’
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র পাল বলেন, ‘চৌদ্দগ্রাম থেকে বেশ কয়েক শিক্ষকের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
[ad_2]
ঠিকানা: ১১৮ হাবিব ভবন ৪র্থ তলা, বিবিরপুকুর পশ্চিম পাড়, বরিশাল-৮২০০
মোবাইল: 01713956574, 01712445776 ইমেইল: [email protected]